সন্তানকে কেন দুধ দেয়নি মা বাঘটি

| শুক্রবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ বলেছেন, সন্তানকে দুধ না দেবার ঘটনা বাঘিনীদের জন্য অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে যেসব বাঘ বন্দি অবস্থায় থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে। এছাড়া এই বাঘিনীর এটিই প্রথম সন্তান জন্মদান, দুধ না দেয়ার সেটাও একটা কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার পরপর ক্যাপটিভ বা বন্দি অবস্থায় থাকা বাঘিনী অনেক সময়ই খুব উদাসীন আচরণ করতে পারে। সন্তান জন্মের পর পর বাঘিনী সাধারণত যা করে, চিড়িয়াখানায় বন্দি বাঘিনী অনেক সময়ই তা নাও করতে পারে। কিন্তু সাধারণত সে সংখ্যা কম হয় জানিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেছেন, জয়া নামের বাঘিনীর ক্ষেত্রে হয়ত সেটাই ঘটেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এবং বাঘ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. ফিরোজ জামান বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ‘বছরের পর বছর বন্দি থাকায় যে কোনো প্রাণীর মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কারণে স্বাভাবিক ক্ষেত্রে যা করার কথা তার ব্যতিক্রম হতে পারে। এক্ষেত্রে হয়তো তাই হয়েছে।’ তিনি মনে করেন, ‘এই বাঘিনী হয় কোনো কারণে আপসেট হয়ে রয়েছে, তার মধ্যে প্রথম মাতৃত্বও তার জন্য সুখকর অনুভূতি না হতে পারে। যে কারণে সে এখনই সন্তানের প্রতি স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত নয়, যে কারণে উদাসীন আচরণ করছে।’
সন্তান জন্মদানের পরপরই সাধারণত বাঘিনী বাচ্চাকে চাটতে শুরু করে, এতে শাবকটির শরীরে রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়। এরপর মা তাকে দুধ দেয়, এবং যত্ন নিতে থাকে। জন্মের দুই ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চার সাথে থাকা প্লাসেন্টা খেয়ে ফেলে বাঘিনী। এটা তাকে ওই সময় শক্তি যোগায়। যেহেতু একসঙ্গে একাধিক সন্তান জন্ম দেয় একটি বাঘিনী, ফলে সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়ায় সাধারণত ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ওই সময়ে চিড়িয়াখানায় থাকা বাঘিনী সাধারণত কর্তৃপক্ষের বা তার পালনকারীর দেয়া খাদ্যগ্রহণ করে না। এমনকি কেউ কাছে ভিড়তে পারে না ওই সময়। এর একটি কারণ হিসেবে ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, বাঘের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সন্তান জন্মদানের পর তার শাবক যদি তার আগে অন্য কেউ ছোয়, তাহলে কখনো সে আর ওই শাবককে ছুঁয়ে দেখবে না। যে কারণে চিড়িয়াখানায় সন্তান জন্মদানের সময় কাছাকাছি কারো যাবার অনুমতি থাকে না। এবং যে ঘরে সন্তান জন্ম দেয় বাঘিনী সেই ঘরটি কয়েকদিন পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয়, কিংবা পুরোপুরি অন্ধকার করে রাখা হয়।
শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, বাঘ শাবকের মৃত্যু হার সারা দুনিয়াতেই বেশি। জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ শাবক মারা যায়। তবে মৃত্যু হার জঙ্গলে থাকা মুক্ত বাঘেদের মধ্যে বেশি।
তিনি জানান, এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মোট ছয়টি বাঘ রয়েছে, এদের মধ্যে দুইটি বাঘ এবং চারটি বাঘিনী রয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি পুরুষ এবং একটি মেয়ে টাইগার আনা হয়। ওই সময় এগুলোর নামকরণ করা হয় রাজ ও পরী। বাঘটির বয়স সে সময় ছিল ১১ মাস আর বাঘিনীর বয়স ছিল ৯ মাস। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পরী নামের বাঘিনী তিনটি সন্তান জন্ম দেয়। ওই তিনটি সন্তানের মধ্যে দুইটি ছিল ‘হোয়াইট টাইগার’, অন্যটি হলুদ-কালো ডোরাকাটা বাঘ, যার নাম রাখা হয় জয়া। সেটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোন হোয়াইট টাইগারের জন্ম, যদি পরে তাদের একটি মারা যায়। বেঁচে থাকা সাদা বাঘিনীর নাম শুভ্রা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅক্সফোর্ডের করোনা টিকা ৩ কোটি ডোজ কিনবে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধজয়ার দুর্বোধ্য আচরণ মারা গেল দুই শাবক