সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত : ছন্দের জাদুকর

| রবিবার , ২৫ জুন, ২০২৩ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২১৯২২)। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় কবি ও ছড়াকার। রবীন্দ্রযুগের খ্যাতনামা ‘ছন্দোরাজ’ কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ছন্দের যাদুকর নামে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি কলকাতার নিমতা গ্রামে ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রজনীনাথ দত্ত। তাঁর পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ব বোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর তিনি পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন। কিন্তু পরে তিনি ব্যবসা বাণিজ্য বাদ দিয়ে নিজেকে কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি নানাবিধ ছন্দোনির্মাণ ও ছন্দ উদ্ভাবনে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। বাংলা ভাষার নিজস্ব বাগধারা ও ধ্বনি সহযোগে নতুন ছন্দসৃষ্টি তাঁর কবিপ্রতিভার মৌলিক কীর্তি। এজন্য তিনি ‘ছন্দের জাদুকর’ ও ‘ছন্দোরাজ’ নামে সাধারণ্যে পরিচিত। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তাঁর প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দসরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবিফারসি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তাঁরই। তিনি অনুবাদ কাব্যেও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে তিনি বাংলা সাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। অনুবাদের সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। সমাজের নিম্নশ্রেণি তথা মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন।

সত্যেন্দ্রনাথ একাধিক ছদ্মনামে কাব্যচর্চা করতেন, যেমন নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ইত্যাদি। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হলো: সবিতা (১৯০০), সন্ধিক্ষণ (১৯০৫), বেণু ও বীণা (১৯০৬), হোম শিখা (১৯০৭), ফুলের ফসল (১৯১১), কুহু ও কেকা (১৯১২), তুলির লিখন (১৯১৪), অভ্রআবীর (১৯১৬), হসন্তিকা (১৯১৯), বেলা শেষের গান (১৯২৩), বিদায়আরতি (১৯২৪), কাব্যসঞ্চয়ন (১৯৩০), শিশুকবিতা (১৯৪৫) ইত্যাদি। তাঁর অনুবাদ কাব্যগুলি হলো: তীর্থরেণু (১৯১০), তীর্থসলিল (১৯১৮), মণিমঞ্জুষা (১৯১৫) এবং গদ্যরচনা জন্মদুঃখী (উপন্যাস, ১৯১২), চীনের ধূপ (প্রবন্ধ, ১৯১২), ছন্দসরস্বতী (প্রবন্ধ, ১৯১৯), রঙ্গমল্লী (নাট্যানুবাদ, ১৯১৩) ইত্যাদি। ১৯২২ সালের ২৫ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝগড়া
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে