সঞ্চয়পত্র : মধ্যবিত্তদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে

| বৃহস্পতিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে যাদের বেশি পরিমাণে টাকা রয়েছে তাঁরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে এর ফলে কমে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের আয়। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানা যায়। এছাড়া পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা নারীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। একইভাবে নতুন সিদ্ধান্তে কমবে প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয়কারীদের আয়ও। প্রবাসীরাও ওয়েজ আর্নার্স বন্ডের বিপরীতে মুনাফা কম পাবেন। এ বিষয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নিয়মবহির্ভূতভাবে সঞ্চয়পত্র খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন থেকে রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির (আরজেএসসি) নিবন্ধন ছাড়া কোনো কোম্পানির নামে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। একইভাবে চাকরিজীবীদের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) ছাড়া প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে না। বেসরকারি ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে বিনিয়োগকারীকে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। আর অটিস্টিকদের শিক্ষা ও সহায়তা প্রতিষ্ঠান খাতে বিনিয়োগ করতে চাইলে তাদের জেলা সমাজ সেবা অফিস এবং স্কুল পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে। সমপ্রতি এ ধরনের ২১টি বিধান আরোপ করে সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের গাইডলাইন জারি করেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর। এটি অনুসরণ করতে সংশ্লিষ্ট সব অফিসকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্য আবেদন করলে দাখিলকৃত কাগজপত্র কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর। এতে বিনিয়োগের উপযুক্ত হলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার অনুমতি দেওয়া হবে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোসাম্মদ মাকছুদা খাতুনের বক্তব্যও প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। তিনি বলেন, এসব নির্দেশনা কার্যকর করতে সঞ্চয়পত্রের সবগুলো অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা থাকবে না। সঞ্চয়পত্র খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে কী ধরনের কাগজপত্র দরকার গাইডলাইনে তা দেওয়া আছে। ফলে চাইলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ করা যাবে না। এর কার্যকারিতার বিষয়ে অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। আশা করছি সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।
করোনা মহামারিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পুঁজি হারিয়ে করছেন হা-পিত্যেশ। কেউ কেউ চাকরি হারিয়ে গ্রামমুখী। সংসার চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস অনেকেরই। সঞ্চয় ভেঙে মানুষ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চালাচ্ছে জীবনচাকা। আবার কিছু কিছু মানুষের যেটুকু সঞ্চয় আছে সেখানেও বসছে নানামুখী থাবা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চবিত্তরা হরেক রকম প্রণোদনা পেলেও ঘুরে দাঁড়াতে মধ্যবিত্তদের জন্য তেমন সুখবর নেই। উল্টো তাদের সঞ্চয়ে বারবার হাত পড়ছে। ব্যাংকে টাকা রেখে কম মুনাফার কারণে অনেকেই সঞ্চয়পত্র কিনে কিছুটা স্বস্তি খোঁজে। এবার সেখানেও পড়ল কোপ। ফলে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানোর প্রজ্ঞাপনে নির্ধারিত আয়ের মানুষের দুঃখী মনে নতুন করে নেমে এসেছে আঁধার!
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সঞ্চয়পত্রের ওপর প্রকৃত নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জীবন আরো নাস্তানাবুদ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য দেশে নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্প কম। বয়স্ক অনেক মানুষ তাঁদের জীবনযাপনের ব্যয় সঞ্চয়পত্রের আয় থেকে করে থাকেন। সরকার ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে ছোট ও মাঝারি সঞ্চয়কারীদের সুবিধার্থে। তবে অনেক অবসরপ্রাপ্ত ও বয়স্ক নাগরিক আছেন, যাঁদের দীর্ঘদিনের সঞ্চয় এর চেয়ে বেশি এবং তাঁরা সঞ্চয়পত্রের আয় থেকেই চলেন। তাঁদের দৈনন্দিন খরচ নির্বাহ করা কঠিন হবে।
একথা সত্যি যে করোনার কারণে সরকার আর্থিক চাপে আছে। তাই সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমানো হয়েছে। এর একটি যুক্তিও আছে। যারা এই করোনার সময়ও ৫০ লাখ বা তার বেশি টাকা সঞ্চয়পত্রে রাখতে পারেন তাদেরকে সরকার সাবসিডি দেবেন-এটা আমরা বলি না। কিন্তু যাদের কম বিনিয়োগ বা যারা এটার ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা দরকার। বয়ষ্ক বা অবসরপ্রাপ্তদের জন্য একটি সিলিং বেঁধে দিয়ে তাদের উচ্চহারে মুনাফা দেয়া যেতে পারে। বিনিয়োগের জায়গাগুলো সংকুচিত হওয়ায় প্রতারকেরা নানা ধরনের লোভনীয় অফার দেয়। ই-কমার্সের নামে প্রতারণা করে। অনেক বেশি মুনাফার লোভে মানুষ তাদের ফাঁদে পা দেয়। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে মধ্যবিত্তদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া যায় কিনা তা ভাবা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে