সঞ্চয়পত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে

স্মরণিকা চৌধুরী | সোমবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

শেষ হয়ে গেল আয়কর মেলা ২০২২২৩। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর আয়কর বিভাগ নিজেদের কার্যালয়ে রিটার্ন দাখিলের জন্য জনসাধারণের সুবিধার্থে আয়কর মেলার আয়োজন করে আসছে বিগত কয়েক বছর ধরে। অনেকে এই মেলা এবং আয়কর রিটার্ন দেওয়ার ব্যাপারে বেশ অজ্ঞ। অনেকে রিটার্ন দাখিল না করলে কী হবে এমন একটা ভাব নিয়ে আয়করের রিটার্ন দাখিল করার জন্য মনে তাগিদ অনুভব করে না। তবে এবার এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে, এবং রিটার্ন দাখিলের পরিমান তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে যাচ্ছে সরকারের সুচিন্তিত আয়কর রিটার্ন এর কিছু নীতির জন্য। একই ছাদের নীচে আয়কর রিটার্ন এর আয়োজন নেই বলে অনেকে আবার ভোগান্তিতেও পড়ছে। কেননা একই পরিবারের যদি মা, বাবা, এবং স্ত্রী, র সঞ্চয় পত্র একই ঠিকানায় বসবাসকারী হলেও তাদের ক্রয়ের তারিখ ভিন্ন হয় তবে ভিন্ন সার্কেলে আয়কর রিটার্ন নেওয়া হয় বিধায় এতে সাধারণ জনগণ বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে। যারা শহরে বাস করে এদের মধ্যে অনেকেরই আয়কর রিটার্ন দাখিলের রীতিনীতি জানা থাকে এবং সাহসিকতার সাথে আয়কর অফিসারের কাছে প্রশ্ন করে নিজের আয়কর রিটার্ন এর স্থান এবং সুবিধা অসুবিধা জেনে নেয়। কিন্তু যারা অর্ধশিক্ষিত কিংবা গ্রামে বাস করে তাদের জন্য রিটার্ন দাখিল করা খুবই কঠিন। আমি অর্থনীতির ছাত্র নই। লেনদেন, দেনাপাওনা তাই আমার বোধের অনেক উর্ধ্বে। তবুও ভুক্তভোগী হিসেবে সামান্য প্রচেষ্টা রাখছি কিছু বলার। ধন সম্পত্তি যখন আয়কর ভুক্ত হয় তখন নির্ধারিত একটা আয়কর জনগণকে দিতে হয়। এই আয়কর দিয়ে সরকার জনকল্যাণমূলক অনেক কাজ করে থাকেন যার কল্যাণে দেশবাসী অনেক সুবিধা ভোগ করে থাকেন।

জনসাধারণও এই আয়কর দিতে দ্বিধা করে না, যদি আয়কর দিতে কোনও হয়রানির শিকার না হয়। বেশ কয়েকবছর যাবৎ আয়কর মেলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ আয়কর দিয়ে আসছে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অংকের ধন সম্পদ থাকলে আয়করের বিধান থাকলেও সরকারের নতুন আইন অনুযায়ী যারা দু লক্ষের অধিক সঞ্চয় পত্র ক্রয় করবেন তাদের অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট নিতে হয়, এবং যখনই একজন সাধারণ মানুষ টিন সার্টিফিকেট নিবেন তাকে তখন আয়করের রিটার্ন দাখিলের আওতায় নিয়ে আসা হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র পাঁচ লক্ষের অধিক না হলে রির্টান দাখিল করতে হয় না সেখানে ও অনিশ্চিত কিছু ব্যাপার রয়ে যাচ্ছে। কেননা নতুন আইন মোতাবেক আয়করের রির্টান দাখিলের ফটোকপি দেখাতে না পারলে পুনরায় সঞ্চয় পত্র গ্রাহক ক্রয় করতে পারছে না। এতে করে জনসাধারণের মধ্যে এক প্রকার বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে সাধারণত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে নিম্নবিত্ত এবং অতি সাধারণ মানুষেরা। যারা রির্টান দাখিলের নিয়মকানুন তেমন কিছু জানেন না। এতে অবশ্যই তারা বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। স্বাভাবিক ভাবে এই শ্রেণির লোকেরা আয়কর নিয়ে অজ্ঞ বলে তাদের বেশ কিছু অর্থ মধ্যস্বত্ব ভোগীরা অহেতুক খরচ করিয়ে থাকেন।

তাছাড়া রিটার্ন দাখিলের সময় কী কী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর ফটোকপি অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে তার ও প্রচার প্রচারণা চালানো উচিত। যেহেতু পুনরায় সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে অসুবিধায় যেন পড়তে না হয় তার জন্য রিটার্ন দাখিল অবশ্যই করতে হয় সেহেতু যারা গ্রামে বাস করে তাদের পক্ষে রিটার্ন দাখিল করা খুবই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাদের সামান্য পুঁজি তে অধিক আইনি প্রয়োগ ঠিক ভাবে তারা গ্রহণ করতে পারে না। তাই সাধারণ জনগণ মনে করে সঞ্চয়পত্র ক্রয়মূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ সহজ করা হোক যাতে করে দু মুঠো ভাত খাওয়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতের জন্য যেন কিছু সঞ্চয় করে রাখতে পারে। তদুপরি আগের তুলনায় দেশের মানুষ স্বাবলম্বিতা অর্জন করছে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। যুক্তিসংগতভাবে তাই পোস্ট অফিসে কিংবা নানা ব্যাংকে সঞ্চয় পত্রে অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট দাখিল করার ব্যাপারে একটু শিথিলতার পদক্ষেপ নেওয়া হলে সাধারণ জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে বলে মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্ত হোক ডিসি হিল
পরবর্তী নিবন্ধশাহানশাহ্‌ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীকে (ক) যেমন দেখেছি