সচেতনতা ও দায়িত্ববোধই অগ্নিকাণ্ডের সিংহভাগ প্রতিরোধ করতে পারে

| শুক্রবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে বর্তমানে অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অল্প কয়েকদিন আগেও আমরা লিখেছিলাম, গত কয়েক বছরে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে অগণিত মানুষের স্বপ্ন। প্রাণহানি যেমন ক্ষতিকর; তেমনি একজনের সম্পদ পুড়ে যখন তার তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন ছাই হয়ে যায়, তখন তার কষ্টও সীমাহীন হয়ে থাকে।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় সংঘটিত ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে এক ব্যক্তি নিহত এবং কেমিক্যাল গুদামসহ বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়েল্ডিং কারখানা ও ছাপাখানা। তবে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় আগুন ছড়িয়ে পড়তে না পারায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা মিলেছে। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এই আগুনে চারদিকে ভয়াবহ রকমের আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রেডক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল থেকে রোগীরা আত্মরক্ষায় বাইরে চলে যান। এই সময় প্রসূতি, গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন আয়ত্তে আনে। তবে ওয়াসার হাইড্রেন্টে পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিভানোর পানি যোগাড়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। পরবর্তীতে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, আন্দরকিল্লা শাহে জামে মসজিদ এবং সিপিডিএল প্যারাগন সিটি থেকে পানি নিয়ে আগুন নিভানো হয়। ফায়ার সার্ভিস বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে উল্লেখ করলেও ক্ষতিগ্রস্ত আলম ইঞ্জিনিয়ারিং এর মালিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, শত্রুতা করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রতি বছরই দেশে এরকম একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আর এই অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ৫ বছরে দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১ লাখ। মাত্র এক বছরে দেশে আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে প্রাণহানির ঘটনা। ২০১৯ সালে দেশে ছোটবড় মিলিয়ে মোট ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দগ্ধ হয়ে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৫৮৬ জন। যেখানে তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিল ১৯ হাজার ৬৪২টি। সে বছর প্রাণ হারিয়েছিল ১৩০ জন। এক বছরে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ২০১৭ সালে এ দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ১০৫ এবং প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ৪৫ জনের। আগুন হলো সাধারণত বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে জ্বালানির কার্বন ও হাইড্রোজেনের মিলনে সৃষ্ট এক বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়া। আলোর মাধ্যমে এ রাসায়নিক বিক্রিয়া শক্তিতে পরিণত হয়। আগুন লাগার মূল কারণ অসাবধানতা। আর এর সঙ্গে যোগ হয় অজ্ঞতা। তাই সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত ভবনে আগুন লাগে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট অথবা গ্যাসলাইন থেকে। আগুন যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। ভবনের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফায়ার অ্যালার্ম ও ফার্স্টএইড ফায়ার ফাইটিং থাকতে হবে। ধোঁয়া যেন ছড়িয়ে না যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

অগ্নিদুর্ঘটনায় ৮০ শতাংশ মানুষ ধোঁয়ার কারণে মারা যায়। ধোঁয়া মানে শুধু কালো ধোঁয়া নয়। বাতাসে যদি কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তবে মানুষ মারা যাবে। বর্তমানে আমরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাচের ব্যবহার করছি। এফ আর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ড আমাদের জন্য বড় ধরনের সতর্কসংকেত।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিভিন্ন পর্যায়ে বৈদ্যুতিক অব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ সরঞ্জাম, অগ্নিকাণ্ডের কারণ জেনেও আগুনের বিভিন্ন উৎসের ব্যবহারে অসচেতনতা, অপব্যবহার, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের অরক্ষিত ও অবৈধ গুদামজাতকরণ ইত্যাদি কারণে অগ্নিকাণ্ড বেড়ে চলেছে। প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ; পঙ্গুত্ববরণ, বিকৃত অবয়ব ও মানসিক বৈকল্য নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে হাজারো জনকে। অগ্নিকাণ্ডের প্রভাবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগে ভুগছে অসংখ্য মানুষ। বায়ু, পানি ও মাটিসহ পরিবেশ দূষণে জনস্বাস্থ্য হয়ে উঠছে বিপন্ন। একটু সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসলীলা সম্পূর্ণ নির্মূল না করতে পারলেও সিংহভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অগ্নি দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। আমাদের শিখতে হবে কীভাবে এসব দুর্ঘটনা মোকাবেলা করতে হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে