দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার এবং আশপাশের উপজেলার মানুষের কাছে চিকিৎসাসেবায় অনেকটা আস্থার জায়গা করে নিয়েছিল চকরিয়া পৌরশহরের প্রাইভেট হাসপাতাল জমজম। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় হাসপাতালটি এখানকার মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিল। অবশ্য বিভিন্ন সময় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে গলাকাটা বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত বুধবার এই হাসপাতাল থেকে মো. হুমায়ুন কবির নামক একজন ডাক্তারকে (লিভার, পরিপাকতন্ত্র, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গ্রেপ্তারের পর ভুয়া শনাক্ত হওয়ায় তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলহাজতে
প্রেরণ করা হয়। এদিকে এই খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তোলপাড় শুরু হয় জেলাজুড়ে।
জমজম হাসপাতালের ভুয়া ডাক্তার -এ খবরে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দেশনা দেন এবং তা দুপুর বারোটার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানান।
সেই নির্দেশনায় বলা হয়- আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দাবিদার এক ব্যক্তি প্রতারণার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হন। বিষয়টি দুঃখজনক। ফলশ্রুতিতে সচেতন মহলের মনে বিভিন্ন রকম সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সেবাদানরত চিকিৎসকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর), বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন সনদ, জাতীয়তা সনদ, মোবাইল নম্বর পত্রবাহক অথবা আপনার প্রতিনিধি মারফত জমা দিতে বলা হলো। বিষয়টি সংবেদনশীল বিধায় কালক্ষেপণ না করার জন্য সতর্ক করা হলো।
সেই নির্দেশনার আলোকে ত্বরিৎ গতিতে সকল ডাক্তারের যাবতীয় কাগজপত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তরে প্রেরণ করার হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম কবির। তিনি দাবি করেন, হাসপাতালটি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল। এরই অংশ হিসেবে একজন জেনুইন ডাক্তারকে ভুয়া বলে চালিয়ে দিয়ে সাজা প্রদান করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত হুমায়ুন কবিরের দাখিলকৃত সনদপত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম ভিন্ন এবং জন্মস্থান দুই জায়গায় কেনো? এমন প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে যান হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘জমজম হাসপাতালটি নিয়ে জনমনে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশক্রমে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসাসেবায় কর্মরত সকল ডাক্তারের যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক দাখিলকৃত সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। এর পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসাথে অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর বিষয়েও খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে।’
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রাইভেট এই হাসপাতালটিতে যেসব মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছেন তারাও ব্যক্তিগতভাবে আইনি প্রতিকার চাইতে পারবেন। পাশাপাশি ভুয়া ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে যারা সুবিধা ভোগ করেছেন দীর্ঘসময় ধরে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার কাজ শুরু করা হয়েছে।’
এদিকে ইবরাহিম মুহাম্মদ নামে একজন শিক্ষক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভুয়া ডাক্তার হুমায়ুন তিনমাস জেল খাটবেন। পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা দেবেন। তারপর জেল থেকে বেরিয়ে আসবেন। তারপর কী হবে? এর পর আইন তাকে কীভাবে ‘অপরাধ’ থেকে বিরত রাখবে? এতোদিন তিনি যত মানুষের টাকা ‘মারলেন’, ‘ক্ষতি’ করলেন, তারা আইনের কী সুরক্ষা পেলো? ভোক্তা হিসেবে তারা কী ক্ষতিপূরণ পেলো? ’
এই ধরণের অনেক পোষ্ট এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যারা পালন করছেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।