ফেসবুক পোস্টে যা লিখলেন আসল ডাক্তার

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার জমজম হাসপাতালের ভুয়া ডাক্তার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সন্ধান মিলেছে আসল ডাক্তারের। তাঁর নাম হুমায়ুন কবির সরকার, বাড়ি গাইবান্ধা
জেলার পলাশবাড়িতে। মূলত তাঁর বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতি করেই মুন্সিগঞ্জের মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির দিব্যি চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়েছেন এই প্রাইভেট হাসপাতালটিতে।
ভুয়া ডাক্তার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ধরা পড়ার পর আসল ডাক্তার হুমায়ুন কবির সরকার তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে (হুমায়ুন কবির হিমু) ‘এক চিকিৎসকের আর্তনাদ’ শিরোনামে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছি। এরপর এমডি নিউরোলজি সম্পন্ন করেছি। আমার ২০ বছরের যাত্রায় কি অমানুষিক পরিশ্রম না করেছি। কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে তার ইয়াত্তা নেই। পরিবার, সন্তান আমাকে কাছে চাইলেও পায়নি। এমডি পরীক্ষার আগের ৬ মাস আমার সন্তানের সাথে দেখা হত কম। খুব সকালে লাইব্রেরিতে যেতাম ফিরতাম রাত ১১টায়। কোনোদিন ছেলের সাথে দেখা হতো, কখনোওবা ও ঘুমিয়ে পড়ত। বেশিরভাগ দিনই ওর সাথে বেশিক্ষণ দেখা হত না। বিষণ্ন মন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। সকালে ওঠে আবার আগের দিনের রুটিন। প্রতিদিন সকালে যখন বাসা থেকে বের হতাম কান্না করতে ইচ্ছে করত। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করত, ইশ্‌ সব ছেড়ে দিয়ে যদি ছেলেটাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারতাম। রাতে ঘুমন্ত ছেলেটাকে বুকে নিলে মনটা কেমন যেন হাল্কা মনে হতো। মাঝে মাঝে আমার রিডিং পার্টনার লিটন দাদার বাসায় পড়তে যেতাম। সারাদিন পড়াশুনা করতাম। দুপুরে খাওয়ার সময় হলে পাড়ার দোকান থেকে কিছু একটা কিনে এনে খেতাম। এগুলো কি খাওয়া যায়। খাওয়া আর কি পেটটাকে শান্ত রাখা। ঘুম যেন না আসে সেজন্য কফির মগে কত যে চুমুক দিয়েছি। আমার মাঝে মাঝে মাইগ্রেনের ব্যথা হত কিন্তু পড়া বন্ধ হতো না। ডাবল ডোজের ওষুধ খেয়ে পড়াশুনা করতাম।
এত মানসিক জোর কিভাবে পেয়েছি? অনেকে অবাক হবেন। যখনি চিন্তা করতাম পাস করলেই বড় চিকিৎসক হবো। আমার চিকিৎসায় অসুস্থ রোগীরা আল্লাহর ইচ্ছায় সুস্থ হবে ভাবতেই মনে প্রশান্তি চলে আসত। কষ্ট লাঘব হতো। সত্যি বলছি রোগীদের মুখগুলো আমাকে একটা মানসিক জোর এনে দিয়েছে। সেই আমার, ছেলে-স্ত্রী, বাবা-মাকে প্রাপ্য হক বঞ্চিত করা লোকটির, শত রাত নির্ঘুম কাটানো মানুষটার অর্জিত সম্মান যদি কেউ বিক্রি করে দেয়, কেমন লাগবে তখন? যে রোগীদের মুখগুলো চিন্তা করে আমি মানসিক জোর পেতাম। যাদের সেবা করবো, চিকিৎসা করবো ভেবেই দিনের পর দিন নিজের ছেলেকে ঠকিয়েছি কিন্তু এক দুর্বৃত্ত, ভণ্ড, প্রতারক তাদের সাথে প্রতারণা করে তাহলে আমার মনের অবস্থা কেমন হয় অনুমান করা যায়।
এক প্রতারক আমার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন ও আমার নাম নকল করে গত ৫ বছর ধরে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। দিনের পর দিন রোগীদের ঠকিয়েছে। আমি সত্যি অনেক ভেঙ্গে পড়েছি। সেই রোগীদের অবস্থা কি তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠছে। কি দেশে বাস করি! একজন প্রতারক রোগীদের নিয়ে যা ইচ্ছে করতে পারে। অথচ বিদেশে কত জবাবদিহিতা।
আমি ধন্যবাদ দিতে চাই কক্সবাজারের চকরিয়ার স্বাস্থ্য প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে। তারা অনেকটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে সেই ভণ্ড, প্রতারককে আইনের আওতায় এনেছেন। আমি খবর পেয়েছি যারা প্রতারককে আইনের আওতায় এনেছেন তাদের বেশ চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে। আমি খুব অবাক হচ্ছি স্থানীয় কিছু মানুষ সেই ভণ্ডকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। তবে আমি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আছি। তারা চাইলে আমি সেখানে যেতে রাজি আছি। তাদের কোনো সহায়তা করতে পারলে আমি খুশি হবো।
আমি চাই, যে হাসপাতাল এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে সিলগালা করা হোক। আমি চাই ভণ্ডটার শুধু ৩ মাস নয়, আজীবন কারাদণ্ড হোক। আমি চাইলেই কি হবে? আমি জানি ভণ্ডটা ৩ মাস পর আবার কারাগার থেকে বের হয়ে আসবে, নতুন করে কোথাও মানুষ ঠকাবে আমার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে। যে রেজিস্ট্রেশন নম্বরের জন্য আমি জীবনের কত কিছু মিস করেছি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়’ স্কুল ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত
পরবর্তী নিবন্ধসকল ডাক্তারের কাগজপত্র তলব স্বাস্থ্য প্রশাসনের