সংরক্ষিত বন থেকে অবাধে গাছ উজাড়

খাগড়াছড়িতে বিনষ্ট হচ্ছে সম্পদ, কমছে জলধারা সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের দাবি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

ক্রমেই উজাড় হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বন। নির্বিচারে বন ধ্বংস, বিদেশী প্রজাতির গাছের আগ্রাসন, বাণিজ্যিক বন সম্প্রসারণ, প্রাকৃতিক বন উজাড় করে রাবার ও ফলদ বাগান তৈরি, বনের গাছ চুরি ও বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে ক্রমেই ধ্বংসের পথে এই প্রাকৃতিক সম্পদ। ফলে এর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর, বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক জলধারা।
এছাড়া অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের কারণে বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বন ধ্বংসের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে শত প্রজাতির বৃক্ষ, লতা-গুল্ম। বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় বনের উপর নির্ভরশীল বণ্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে বন বিভাগের কোন নজরদারি নেই। প্রাকৃতিক বন বিপন্ন হওয়ায় বিপন্ন হয়ে উঠছে বনের উপর নির্ভরশীল মানুষেরা। বন ধ্বংস হওয়ায় পানি উৎস কমেছে প্রায় ৬১ শতাংশ। শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি ঝরনায় পানি উৎস কমে আসে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বনের আয়তন ৩ লাখ ২২ হাজার ৩৩১ হেক্টর। খাগড়াছড়িতে সংরক্ষিত বনের পরিমাণ ৬ হাজার ২শ একর এবং অশ্রেণিভুক্ত বনের আয়তন প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩২ একর। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বন রক্ষায় এখনই উদ্যোগের তাগিদ দিয়েছে পরিবেশকর্মীরা। বন উজাড়ের চিত্র পাওয়া যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সীমানাপাড়া এলাকায়। পাড়া থেকে প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর চোখে পড়ে বনের গাছ পরিবহন করার জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে। গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত চিত্তরঞ্জন চাকমা, জ্ঞান চাকমা, আলো জীবন চাকমাসহ একাধিক শ্রমিক জানান, মূলত পাহাড় খাস হলেও বনের মালিকানায় রয়েছে স্থানীয়রা। আমরা মালিকদের কাছ থেকে পাহাড়ের গাছ কিনে নিই। ইটভাটায় গাছ সরবরাহকারী দালালরা (মাঝি) স্থানীয়দের কাছ থেকে পাহাড়ের গাছ কিনে নেয়। তারপর সেসব গাছ নির্বিচারে কাটা হয়। গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত প্রতিটি শ্রমিকের মজুরি ৩শ টাকা। সারাদিনে অন্তত ৫শ মণ গাছ কর্তন করেন তারা।
সংরক্ষিত বন রক্ষার পাশাপাশি বিদ্যামান বন আইনের সংস্কার চায় পরিবেশ কর্মীরা। খাগড়াছড়ি পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের কারণে বর্ষাকালে মাটির ক্ষয় বেড়েছে। বন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর প্রভাব পড়েছে। জুম চাষের কারণেও বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বন ধ্বংসের কারণে বিলুপ্তির পথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ বন্যপ্রাণী। খাগড়াছড়ির বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, একসময় পাহাড়ে ভাল্লুক, বাঘ, সাম্বার হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি দেখা গেলেও আজ তা বিপন্ন। একসময় হর্নবিলনহ অনন্ত ৩৭৫ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। যা আজ হারিয়ে গেছে।
খাগড়াছড়ির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাংয়ের নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, শত শত বছরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বনে মূল্যবান কাঠ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বন কমে যাওয়ায় পাহাড়ে পানি উৎসও কমে গেছে। সনাতন পদ্ধতিতে জুম চাষের কারণে কমছে বনের আয়তন।
প্রাকৃতিক বনের গাছ পাচার রোধে কাজ করার কথা জানিয়েছে বন বিভাগ। খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেছেন, ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে বনের কাঠ পোড়ানো সর্ম্পূণ নিষেধ। কেউ যদি বনের কাঠ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় স্কুলশিক্ষককে কুপিয়ে জখম করল বোনজামাই