শ্রীলঙ্কায় তীব্র অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে বাড়তে থাকা সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা। শনিবার গভীর রাতে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকেই তা কার্যকর হবে বলে এক ঘোষণায় জানিয়েছে দেশটির সরকার। গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে পারেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের অনুরোধে তিনি পদত্যাগে রাজি হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কলম্বো পেজ। শুক্রবার রাতে দেশটিতে দ্বিতীয় দফায় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। অব্যাহত বিক্ষোভের মধ্যে পরিস্থিতি সামলাতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য পদত্যাগের কথা এলো। খবর বিডিনিউজের।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার জরুরি পরিস্থিতির কারণে এবং জননিরাপত্তা, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারণের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও পরিষেবা বজায় রাখতে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের এ আদেশ ৩০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্টের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। সর্বশেষ জরুরি অবস্থায় কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু এর আগের জরুরি অবস্থায় সামরিক বাহিনী মোতায়েন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই লোকজনকে গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়াসহ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি বাড়ানো হয়েছিল। এবার এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই তার নিন্দা জানান দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত।
গোটাবায়াকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে সাজিথ বলেন, সঙ্কটের সমাধান খোঁজার বদলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। কলম্বো পেজ-এর প্রতিবেদন বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের বাড়িতে গোতাবায়া রাজাপক্ষের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে, চলমান আর্থিক সংকট সামাল দিতে না পারার কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে মন্ত্রিসভাও বিলুপ্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে বলেছেন, যদি তার পদত্যাগই শ্রীলঙ্কার অব্যাহত আর্থিক সংকটের একমাত্র সমাধান হয়ে থাকে, তাহলে তিনি তা করতে রাজি আছেন। জরুরি অবস্থা জারির এ সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেভিড ম্যাককিনন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রীলঙ্কাজুড়ে চলা বিক্ষোভে নাগরিকরা ব্যাপকভাবে অংশ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করছিল, এতে দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছিল।
এনডিটিভি জানিয়েছে, শুক্রবার একদল শিক্ষার্থী পার্লামেন্টে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ফের কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে ও জলকামান ব্যবহার করে। প্রেসিডেন্ট ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এ দিন থেকে দেশটির সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মীদের শুরু করা ধর্মঘটে দ্বীপটি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার শ্রীলঙ্কাজুড়ে হাজার হাজার দোকান, স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কলম্বোর প্রধান রেলস্টেশন বন্ধ ছিল। নিকটবর্তী টার্মিনাল থেকে শুধু কিছু সরকারি বাস চলাচল করেছে। দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। তবে হাসপাতাগুলোতে জরুরি পরিষেবা অব্যাহত ছিল। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র আর্থিক সংকট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। কোভিড-১৯ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বাড়তে থাকা তেলের মূল্য ও প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া সরকারের কর হ্রাসের সিদ্ধান্তে মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে দেশটি। চলতি সপ্তাহে দেশটির অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্যবহার করার মতো মাত্র ৫ কোটি ডলার রিজার্ভ আছে শ্রীলঙ্কার।