শ্রাবণ মাসের এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শ্রাবণীর জন্ম হয় বলে ভালোবেসে বাবা–মা তার নাম রেখেছেন শ্রাবণী। ‘শ্রাবণী’ যেমন নাম তেমনি কাজ। কারণে অকারণে শ্রাবণীর মনের কোণে প্রায় সময়ই শ্রাবণের মেঘ জমে থাকে। সেই মেঘ আবার মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়ে ঝরেও পড়ে। আজও কোনো এক অজানা কারণে তার মনের কোণে মেঘ জমেছে তাই জ্যোৎস্না মাখা মৃদুমন্দ হাওয়া খেতে খেতে জানলার পাশে বসে আকাশ পানে অপলক চেয়ে আছে আর আনমনে সুখের সংজ্ঞা খোঁজার চেষ্টা করছে। সুখ কী? এই সুখের ঠিকানা কোথায় গেলে পাওয়া যাবে? সে কি আদৌ বেঁচে আছে? নাকি সুখের আসায় সবাই মরীচিকার পিছু ছুটছি?
অন্যদের কাছে সুখের সংজ্ঞা কী তা তার অজানা। তাই আপাতত তার কাছে ‘সুখ’ কি সেটা নিয়েই ভাবছে। শ্রাবণীর কাছে – মনের সবটুকু অনুভূতি স্নেহ মায়া মমতার সংমিশ্রণে জীবনের ছোট ছোট সকল সুন্দর প্রাপ্তি গুলো উপভোগ কারর নাম ‘সুখ’। মনের গভীরে খুব সংগোপনে লালিত কিছু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার নাম ‘সুখ’। হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসতে পারার নাম ‘সুখ’। জীবনে সুখে–দুঃখে, আনন্দ–বেদনায় সাপোর্ট করার মতো এক টা প্রাণের বন্ধু থাকার নাম ‘সুখ’। সেই প্রাণের বন্ধু নামক মানুষটার মিষ্টি হাতছানি এই এলোমেলো জীবনকে গুছিয়ে দিবে তার নাম ‘সুখ’। মাঝে মাঝে মধ্য দুপুরের সোনালি রোদে পাশাপাশি বসে একে অপরকে দু–এক লোকমা খাইয়ে দিবে, মৃদুমন্দ আদুরী বিকেলে রিঙায় ঘুরে বেড়াবে, সাগরের ঢেউ এর কাছে গিয়ে হৃদয়ে সাগরের বিশাল উদারতা নিয়ে ফিরবে কিংবা পাহাড়ি কন্যার কাছে গিয়ে বুকের সকল জমাট বাঁধা দুঃখগুলো জমা রেখে পাহাড়ি কন্যার সতেজ স্নিগ্ধতা নিয়ে ফিরে আসবে এর নাম ‘সুখ’। পূর্ণিমার চাঁদ যখন রাতের বিশাল আকাশকে আলোকিত করবে তখন দু‘জনে পাশাপাশি বসে গল্পের ছলে জীবনের সকল পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মিলিয়ে নেবে, ভালোবাসার কোমল হাতছানি দিয়ে সেই প্রাণের বন্ধুটি যখন রাঙাবে এই জীবন আর বলবে, –কী এতো ভাবছো বলোতো! দেখ, আমিতো আছি তোমার জীবন জুড়ে তাই সকল ভাবনাগুলো পাঠিয়ে দাও নির্বাসনে। শ্রাবণীর কাছে এ সকল ছোট ছোট প্রাপ্তির নাম ‘সুখ’।
আচ্ছা,এগুলোতো সব শ্রাবণীর মনের কথা। তাই ছোট ছোট যে প্রাপ্তিগুলো শ্রাবণীকে সুখী করবে সেগুলো অন্যদেরকে সুখী নাও করতে পারে। হয়তো এ কথাগুলো শুনার পর অনেকেই বিদ্রুপ করবে ও মুখ কেলিয়ে হাসবে আর বলবে -‘সব আবেগের কথা আর আবেগ দিয়ে কি জীবন চলে’? শ্রাবণীর কথা একটাই, এগুলোও বলার মতো কথা। কথাগুলো কারো কারো কাছে তুচ্ছ মনে হলেও এগুলোর গভীরতা বোঝার মতো মন বা ক্ষমতা আল্লাহ সবাইকে দেন না। সমাজে এমনও অনেক বিবেকবান, সৎ ও সুন্দর মনের অধিকারী মানুষ আছেন যারা খুব সুন্দর করে দয়িত্ব পালন করতে পারে কিন্তু ছোট ছোট এ অনুভূতিগুলোর গুরুত্ব ঠিক বুঝতে পারে না যতক্ষণ না তাদেরকে কেউ বুঝিয়ে বলে। শ্রাবণীর মতে, জীবনে সুন্দরভাবে চলার জন্য যেমন দয়িত্বশীল হওয়া ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন তেমনই আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষণিকের এই ছোট্ট জীবনকে সুন্দর করে উপভোগ করার জন্য প্রয়োজন অন্তরে ভালোবাসা আবেগ অনুভূতি স্নেহ মায়া মমতা ধারণ করা। যে জীবনে এ সকল অনুভূতির কোনো উপস্থিতি নেই সে জীবনকে জীবন না বলে জড় পদার্থ বলাই উত্তম। তাইতো দীপ্তিময় উজ্জ্বল এক সুন্দর ভবিষ্যতের অনাবিল সুখের সন্ধানে পথ চেয়ে আছে শ্রাবণী। সে আদৌ জানেনা ‘সুখ’ কখন কিভাবে তার কাছে ধরা দেবে! তাই আনমনে মান্না দে‘র খুব বিখ্যাত একটা গান গুনগুনিয়ে সে গেয়ে যায়– সবাই তো সুখি হতে চায়,/ কেউ সুখি হয় কেউ হয়না। জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা, / কপালে সবার নাকি সুখ সয়না!