শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়: সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক

| রবিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রোত্তর একজন শক্তিশালী লেখক। তিনি ১৯০১ সালের ১৯ মার্চ বীরভূম জেলার রূপসীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ধরনীধর মুখোপাধ্যায় ও মা হেমবরণী দেবী। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বোলপুরহাই স্কুলে। বর্ধমানে স্কুল জীবনে তার সাথে কাজী নজরুল ইসলামের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। সেই সময় শৈলজানন্দ লিখতেন পদ্য আর নজরুল লিখতেন গদ্য। কিন্তু পরবর্তীতে দুজনেই প্রতিষ্ঠা পায় বিপরীত মাধ্যমে। তাদের প্রিটেস্ট পরীক্ষার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে তারা দুজনে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে যান। নজরুল যু্‌দে্ধ যোগ দেন। কিন্তু বাবার আপত্তিরত তিনি যুদ্ধে যেতে পারেন নি। ফিরে এসে নাকড়াকোন্দা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে বাগবাজারের কাশিমবাজার পলিটেকনিক কলেজে যোগ দেন টাইপরাইটিং শিখতে। ১৯২১ সালে শ্বশুরবাড়ি সূত্রে কুমারডুবি কয়লাখনিতে কুলি মজুর সরবরাহের কাজে পান। কুমারডুবি কয়লাখনিতে কাজ করার সময়েই একের পর এক স্মরণীয় গল্প লেখেন। তার লেখাতে কয়লাখনির শ্রমিকদের শোষিত জীবন উঠে আসে। বাঁশরী পত্রিকায় তার রচিত ‘আত্মঘাতীর ডায়রী’ প্রকাশিত হলে দাদামশাই তাকে আশ্রয় থেকে বিদায় দেন। এরপর তিনি কলকাতায় আসেন। এখানে অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক যেমন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু, প্রবোধকুমার সান্যাল, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, দীনেশরঞ্জন দাস প্রভৃতির সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তিনি কালিকলম এবং কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক শ্রেণিভুক্ত হন। কল্লোল ও কালিকলম পত্রিকাকে ঘিরে সাহিত্য আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন তিনি। খনি শ্রমিকদের নিয়ে সার্থক বাংলা গল্প রচনায় শৈলজানন্দ পথিকৃৎ। উপন্যাস এবং গল্পসহ প্রায় ১৫০টি বই তিনি লিখেছেন। নিজের কাহিনী চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় শৈলজানন্দের বিখ্যাত ছবি নন্দিনী, বন্দী, শহর থেকে দূরে, অভিনয় নয়, মানে না মানা (হীরক জয়ন্তী পালিত প্রথম বাংলা ছবি), কথা কও, আমি বড় হব, রং বেরং প্রভৃতি। তার প্রথম ছবি ছিল পাতালপুরী। আকাশবাণীতে তিনি বহু নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছিলেন। তিনি আনন্দ পুরস্কার, উল্টোরথ পুরস্কার এবং যাদবপুর এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট পান। ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন কোনোভাবেই কাম্য নয়