চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রচার–প্রচারণা শেষ হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। এখন চলছে শেষ সময়ের প্রচারণা। প্রধান দুটি সংগঠন ও অন্যান্য প্রার্থীরা আইনজীবীদের চেম্বারে, পথে–ঘাটে, আদালতের বারান্দায়, এমনকি আদালত পাড়ার সর্বত্রই চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়ে নিচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, আইনজীবীদের কয়েকটি ভবনের ফ্লোরে ফ্লোরে প্রার্থীদের সমর্থকরা কার্ড বিলি করছেন। প্রার্থীর পরিচয় তুলে ধরছেন। দুপুরের দিকে আদালত পাড়ার প্রবেশ মুখে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েকজন আইনজীবী। তাদের হাতেও ছিল প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত কার্ড। নির্বাচনকে ঘিয়ে তরুণ আইনজীবীদের সবচেয়ে বেশি উৎফুল্ল দেখা গেছে। দেশের অন্যান্য নির্বাচন দেখে আসলেও আদালত পাড়ার নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবেন এবারই প্রথম এমন অসংখ্য আইনজীবী রয়েছেন। তাদের একজন নুসরাত জাহান পিংকি। তিনি আজাদীকে বলেন, যিনি সৎ, যিনি আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করবেন। তাকেই ভোট প্রদান করবো।
এবারের জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ২১টি পদের বিপরীতে নির্বাচন কমিশন থেকে বৈধতা পেয়েছেন ৪৫ প্রার্থী। এ ৪৫ জনই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে পরে দাখিল করেছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে কামাল উদ্দিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে সুচিত্রা লালা মুন্নী ও সদস্য পদে নাসিমুল আবেদীন চৌধুরী রায়হান। বাকী ৪২ প্রার্থীর মধ্যে ২১ জন করে আওয়ামীপন্থী সমন্বয় পরিষদ ও বিএনপিপন্থী ঐক্য পরিষদের প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনসূত্র জানায়, সমন্বয় পরিষদের ২১ প্রার্থীর মধ্যে সভাপতি পদে লড়বেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেম, সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আজিজ উদ্দীন (হায়দার), সহসভাপতি পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহফুজুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক পদে মুহাম্মদ ফখরউদ্দিন জাবেদ, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মো. আখতারুজ্জামান (রুমেল), অর্থ সম্পাদক পদে খাইরুন্নিসা আখতার (নিসা), পাঠাগার সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আফজাল হোসাইন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নাসরিন আক্তার চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. হাবিবুর রহমান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক পদে অভিজিত ঘোষ এবং নির্বাহী সদস্য পদে মো. আবু কাউছার (পন্নী), এমরানুল হক আজাদ, চৌধুরী আহমেদ মহসিন, ফাহমিদা চৌধুরী, মো. ফখরুল ইসলাম (গালিব), মো. হাবিবুর রহমান, খোকন কান্তি তালুকদার (অভিজিৎ), কোহিনুর আকতার, মিটুন দাশ, মনির আহমদ (মামুন) ও মো. রাইসুল কবির। ঐক্য পরিষদের ২১ প্রার্থীর মধ্যে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি পদে মো. আবদুল কাদের, সহসভাপতি পদে মো. জালাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী (রাজ্জাক), সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মো. কাশেম কামাল, অর্থ সম্পাদক পদে কাজী মো. আফরাফুল হক আনসারী (জুয়েল), পাঠাগার সম্পাদক পদে আহমদ কবির (করিম), সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মারুফ মো. নাজেবুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. সরোয়ার হোসাইন (লাভলু), তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আবদুল জব্বার এবং সদস্য পদে আবদুল্লাহ আল ফাহাদ, আয়শা আখতার সানজি, এহছান উল্লাহ মানিক, শাহ ইমতিয়াজ রেজা চৌধুরী নিশান, ইমরান হোসাইন চৌধুরী, মো. কায়সার, মোহাম্মদ মুরশেদ, নুর হোসেন, মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ শাকিল ও মো. সাহেদ হোসেন।
আওয়ামীপন্থী সমন্বয় পরিষদের নেতা ও জেলা পিপি (সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারি) শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আজাদীকে বলেন, প্রতিদিনই আমাদের প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আজকেও (গতকাল) আদালত পাড়ার নানা জায়গায় আমরা প্রচারণা চালিয়েছি। আমরা আশাবাদী। আমাদের প্রার্থীরা জয় লাভ করবেন।
বিএনপিপন্থী ঐক্য পরিষদের সভাপতিপ্রার্থী মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী (বর্তমান সভাপতি) আজাদীকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমরা মাঠে রয়েছি। ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। ভোটারদের কাছ থেকে পজিটিভ বার্তা পাচ্ছি। আশা করছি, জয় আসবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফখরুদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত সবকিছু শাস্তিপূর্ণ হয়েছে। প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারণা নির্বিঘ্নে চালাচ্ছেন। কোথাও কোনো রকম সমস্যা দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার প্রচারণা শেষ হচ্ছে। সেদিনই প্রার্থী পরিচিতি সভা করব আমরা।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভোট প্রদান করবেন ৫ হাজার ৬১৯ জন।