শেষ মুহূর্তে ডাক পড়ল ঢাকায়

মাইলেজ ভাতা : রেল সচিবের সাথে আজ বৈঠক আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে কাল থেকে কর্মবিরতি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মাইলেজ ভাতা নিয়ে আন্দোলনে থাকা রেলের রানিং স্টাফ (লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, গার্ড ও টিটিই) সমিতির কেন্দ্রীয় নেতাদের শেষ মুহূর্তে ডাক পড়েছে রেলভবনে। মাইলেজ জটিলতা নিরসনে আজ রোববার বিকাল ৩টায় রেল সচিব মিটিং ডেকেছেন।
বৈঠকে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে গতকাল রাতে ঢাকা যাত্রা করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতি কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে মাইলেজ জটিলতার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হলে সাথে সাথে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আগামীকাল সোমবার থেকে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বহাল থাকবে বলে জানান রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ভূইয়া।
রেলওয়েতে সৃষ্ট মাইলেজ জটিলতাকে কেন্দ্র করে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির আন্দোলনের জেরে শিডিউল বিপর্যয় নেমে এসেছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেনে। আন্দোলনকারীদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে কর্মবিরতি।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন আজাদীকে বলেন, রেলের রানিং স্টাফরা (এলএম, এএলএম, গার্ড, টিটিই) যে বিষয়ে আন্দোলন করছেন তাদেরকে রোববার (আজ) রেলভবনে ডাকা হয়েছে। সচিব মহোদয় তাদের সাথে আলোচনা করবেন। বৈঠকে আমরা সবাই থাকব। সমস্যা যেমন আছে, তার সমাধানও আছে। আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ভূইয়া আজাদীকে বলেন, আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। রানিং স্টাফদের মাইলেজ জটিলতার বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকাল ৩টায় রেলপথ ভবনে সচিব মহোদয় মিটিং ডেকেছেন। বৈঠকে যোগ দিতে রাতে ঢাকা যাত্রা করেছেন সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হলে সাথে সাথে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। আর আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে কাল থেকে কর্মবিরতি চলবে। বৈঠকে চট্টগ্রাম, ঢাকা, পাকশী ও লালমনিরহাট এই চার বিভাগের রেলওয়ের শীর্ষ নেতাদেরও ডাকা হয়েছে।
এদিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালক ও গার্ডরা অতিরিক্ত ডিউটি (৮ ঘণ্টার বেশি) বর্জন করেছেন। এর ফলে চালক সংকটের কারণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। একে একে বন্ধ হয়ে পড়ছে অনেক ট্রেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রুটের তিন জোড়া শাটল ট্রেন, চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাটগামী এক জোড়া ডেমু ট্রেন ও ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) মালবাহী চারটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন ট্রেন চালক ও গার্ড জানান, রেলের সংস্থাপন কোড অনুযায়ী, রানিং স্টাফরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা মাইলেজ বা রানিং ভাতা হিসেবে পেয়ে আসছেন। জনবল সংকটের কারণে চালক, গার্ড ও টিটিইরা দৈনিক ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চালান। প্রতি মাসে যেখানে রানিং স্টাফরা ১১ হাজার মাইলের মাইলেজ ভাতা পেতেন সেখানে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ‘আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে’ তাদের মাইলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তিন হাজার মাইলের বেশি দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিন হাজার মাইলের বেশি ট্রেন চালালেও তারা বেশি মাইলের জন্য কোনো ভাতা পাবেন না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেসিকের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ টাকা যোগ হবে না। এটি রেলওয়ে আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি বাস্তবায়ন করা হলে মাইলেজ সুবিধা থেকে চালক-গার্ডরা বঞ্চিত হবেন। নতুন এই নিয়মে রেলওয়ে রানিং স্টাফরা ক্ষুব্ধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার পোর্ট ইয়ার্ড থেকে ৪ পণ্যবাহী ট্রেনের যাত্রা বাতিল
পরবর্তী নিবন্ধ‘জাপানি ভালোবাসা’ ১৫ একর প্যারাবন কাটার প্রস্তুতি!