শেষ ট্রিপে ইলিশ ধরতে সাগরে অর্ধলক্ষাধিক জেলে

কয়েকদিন পরেই নিষেধাজ্ঞা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী কয়েকদিন পরেই সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। মাছ ধরার সময় হাতে বাকি আছে মাত্র ৩/৪ দিন। এরপরও ‘শেষ ট্রিপে’ ইলিশ ধরার জন্য কঙবাজারের অর্ধলক্ষাধিক জেলে এখন সাগরে।
ট্রলার মালিকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনীর প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগরে দুয়েকদিন মাছধরা বন্ধ থাকার পর অনুকূল আবহাওয়ায় শনিবার থেকেই নতুন উদ্যমে মাছ ধরতে যাচ্ছেন জেলেরা। রোববার পর্যন্ত কক্সবাজারের ৮০ শতাংশের বেশি ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গেছে। সময় কম থাকায় বাকি ট্রলারগুলোর মাছ ধরতে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আগামী ২০ মে (১৯ মে মধ্যরাত বা রাত ১২টা) থেকে শুরু হবে এবং ২৩ জুলাই শেষ হবে। সে হিসাবে ১৯ মে পর্যন্ত মাছ ধরার সুযোগ থাকলেও সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে এনে নৌকা থেকে খালাস করা, বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করা এবং ট্রাকবোঝাই করে দেশের অন্যত্র সরবরাহ ও বিপনন করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ায় কার্যত আরো কয়েকদিন আগেই সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়। জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, কক্সবাজারে ছোট বড় প্রায় ৭ হাজার যান্ত্রিক নৌযান সাগরে মাছ ধরে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো এক সপ্তাহ থেকে পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে যায়। তবে বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে বলে এগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায়।
তিনি জানান, বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। কিন্তু গত বছর অক্টোবরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে প্রত্যাশিত হারে সাগরে কোনো জাতের মাছেরই দেখা মিলছে না। এমনকি গত মাসে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ায় মাছধরা বন্ধ রেখে কঙবাজারের অধিকাংশ ট্রলারই ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়। যারমধ্যে শেষ ট্রিপে ইলিশ ধরার জন্য অধিকাংশ ট্রলারই এখন সাগরে রয়েছে।
দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম বলেন, গত কয়েক মাসে সাগরে তেমন মাছ ধরা পড়েনি। ফলে অধিকাংশ নৌকাই ঘাটে নোঙর করা ছিল। তবে বৃষ্টির পর মাছের আশায় প্রায় সকল জেলেই এখন সাগরে মাছ ধরছে। আগামী ১৯ মে বিকাল পর্যন্ত এই বোটগুলো মাছ ধরবে। যেহেতু এই বোটের মাছগুলো স্থানীয় বাজারেই বেশি বিক্রি হয়।
কঙবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, আগামী ২০ মে থেকে মাছধরা ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও ১৮ মে এর পর ফিশারীঘাট থেকে দেশের অন্যত্র আর মাছ সরবরাহ করা হবে না। আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু হলেও সেই মাছ ধরে অবতরণ কেন্দ্রে আসা শুরু হবে আরো প্রায় এক সপ্তাহ পর। সে হিসাবে আগামী আড়াই মাসের জন্য ‘মৎস্যশূণ্য’ খা খা প্রান্তরে পরিণত হতে যাচ্ছে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
সাগরে মাছধরা বন্ধ থাকার কারণে শহরের বরফকলগুলোও আগামী দুই মাসাধিককাল সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ জেলার প্রায় এক লাখ লোক সাময়িক বেকার হয়ে যাচ্ছে বলে জানান ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন।
তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, সাগরে মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে সরকার। সেই প্রণোদনা যথাসময়ে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সাগরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের এবং অক্টোবরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে। ২০১১ সাল থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে ২০১৯ সাল থেকে। এর প্রভাবে গত কয়েক বছরে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রাচূর্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করে আসছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা। তবে গত ৬ মাসে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরা পড়ার হার গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে দাবি করেন জেলেরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখরচ না হওয়া ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত
পরবর্তী নিবন্ধআর কত পি কে হালদার আছে তালিকা চাই : ফখরুল