শেষ কেমোথেরাপির আগেই সব শেষ

দুর্ঘটনায় মেয়ে, বোনসহ নারীর মৃত্যু, আরেক মেয়ে গুরুতর আহত।। মারা গেছেন অ্যাম্বুলেন্সের চালক-হেলপারও

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন কুয়েত প্রবাসী মোরশেদ আলমের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৩২)। আগ্রাবাদ বলির পাড়া সিডিএ ১ নম্বর রোডে নিজস্ব ৩ তলা ভবনে এ পরিবারের বাস। দুই মেয়ে নিয়েই মোরশেদ-ফরিদার সংসার। বড় মেয়ে ক্লাস এইটে উঠেছে এবার। আর ছোটটি স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে।
ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকে সিরাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ফরিদা। সেখানে গিয়েই নিয়মিত কেমোথেরাপি নিতেন। এ পর্যন্ত ৬/৭ বার গেলেও কোনোবারই মেয়েদের নেননি। কিন্তু এবার শেষবারের মতো কেমোথেরাপি নিতে যাচ্ছিলেন ফরিদা। কোরবান পর্যন্ত থাকতে হবে, এজন্য সাথে নিয়ে যান দুই মেয়েকেও। তবে শেষবারের কেমোথেরাপি আর নেয়া হয়নি ফরিদার। তার আগে সড়কেই ফেলতে হল শেষ নিঃশ্বাস। চট্টগ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিরাজগঞ্জের হাসপাতালে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ফরিদার প্রাণ। সাথে থাকা তার বড় মেয়ে মারিয়া (১৫) ও বড় বোন ফেরদৌসী বেগমের (৪০) জীবন প্রদীপও নিভে গেছে। মারা গেছেন অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও হেলপার। গতকাল শনিবার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার হাতিয়ায় সংঘটিত এই দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ৫টি তাজা প্রাণ। ফরিদা বেগমের ছোট মেয়ে মাহি (৬) ও এক ফুফাত ভাইসহ আহত হয়েছেন আরো ৬ জন। বিপরীত দিক থেকে আসা মাছবাহী একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক সাদ্দাম হোসেন (২৯) সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার চালা এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে। আর হেলপার জুয়েল (২৮) সলঙ্গা উপজেলার রানীনগর এলাকার আবদুর রাজ্জাক মণ্ডলের ছেলে। এর মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে এবং অপর দুজন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
দুর্ঘটনায় ফরিদা বেগমসহ ৫ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোরশেদ আলমের ভাগিনা নাসির ইসলাম। তিনি আজাদীকে বলেন, আমার মামি, মামাতো বোন ও মামির বড়বোনসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। অপর মামাতো বোন মাহি গুরুতর অবস্থায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃতদেহ নিয়ে গতকাল রাতেই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মামা অনেক চেষ্টা করেও টিকিট পাননি। রোববার (আজ) বিকেল সাড়ে চারটার ফ্লাইটে তিনি চট্টগ্রামে আসবেন। তিনি আসার পর লাশ দাফন করা হবে।
এবার মামির শেষ কেমো ছিল জানিয়ে নাসির ইসলাম বলেন, তিনি এর আগে আরো বেশ কয়েকবার সেখানে গেছেন। কেমোথেরাপি নিয়েছেন। কিন্তু কোনোবার মেয়েদের নেননি। কিন্তু এবার নাকি বেশি দিন থাকতে হত। কোরবানির সময়ও সেখানে কাটাতে হতো। এজন্য দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে যান। সেখানেই একটি ছাগল কোরবানি দেওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু পথেই সবকিছু শেষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেষ হলো বাজেট অধিবেশন
পরবর্তী নিবন্ধটানা সপ্তম দিন শতাধিক মৃত্যু, কমেছে শনাক্ত