রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে চিরবৈরী পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছে ভারত। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে বলতে গেলে প্রায় একাই ম্যাচ বের করে আনেন বিরাট কোহলি। কিছুদিন আগেও ব্যাটিং নিয়ে সমস্যায় থাকা কোহলি সময় মতো জ্বলে উঠে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছে পাকিস্তান। তবে শেষ হাসি ভারতেরই। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৪ উইকেটে জয় পায় ভারত। শুরুতে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ভারতীয় দল। কোহলি একাই করেন অপরাজিত ৮২ রান। এছাড়া ৪০ রান করে বড় ভূমিকা রাখেন হার্দিক পান্ডিয়া।
শেষ ওভারে ভারতের লক্ষ্য ছিল ১৬ রান। আর পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম শেষ ওভারে স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজকে বোলিংয়ে আনেন। প্রথম বলেই হার্দিককে ক্যাচ আউট করে বিদায় করেন নওয়াজ। বাবরের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন হার্দিক। এর আগে কোহলির সঙ্গে গড়েন ১১৩ রানের অনবদ্য জুটি। এরপর ক্রিজে আসা দীনেশ কার্তিক সিঙ্গেল নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইক দেন। তৃতীয় বলে আসে ২ রান। চতুর্থ বলে ডিপ মিড-উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন কোহলি। সঙ্গে উপহার হিসেবে পান নো বল। এরপর ওয়াইড ও বাই মিলিয়ে আসে আরও ৪ রান। এ সময় বেশ এলামেলো হয়ে পড়েন নওয়াজ। শেষ ২ বলে ২ রানের সহজ লক্ষ্য পার হতে গিয়ে পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে ফেরেন কার্তিক। কিন্তু ওয়াইড দিয়ে চাপটা ভারতের ওপর থেকে সরিয়ে নেন বোলার নওয়াজ নিজেই। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৫৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি।
এর আগে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ভারত ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু পায়নি। দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা ১০ রানের মধ্যেই বিদায় নেন। পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহর প্রথম বলে বোল্ড হন লোকেশ। এরপর চতুর্থ ওভারে হারিস রৌফের বলে স্লিপে থাকা ইফতিখার আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আরেক ভারতীয় ওপেনার রোহিত। ভারতীয় অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। ষষ্ঠ ওভারে হারিসের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয় সূর্যকুমার যাদব। এরপর দুর্ভাগ্যজনক রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন অক্ষর প্যাটেল। ৩১ রান রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। বিপর্যয়ের মুখে রুখে দাঁড়ান কোহলি ও হার্দিক। ধীরে ধীরে হাত খুলতে শুরু করে দলকে পথ দেখাচ্ছিলেন এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। শাহিন আফ্রিদির করা ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে কোহলি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩৪তম টি-টোয়েন্টি ফিফটি; খেলেছেন ৪৩ বল। শেষ ২ ওভারে ভারতের সামনের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১ রান। ১৯তম ওভারে হারিসের প্রথম ৪ বল থেকে আসে মাত্র ৩ রান। পরের দুই বলে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে লক্ষ্যটাকে হাতের নাগালে আনেন কোহলি।
এর আগে টস হেরে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। তবে সেখান থেকে ঘুড়ে দাড়িয়ে ২০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে তারা। প্রথম ওভারে পাকিস্তান তুলতে পারে মাত্র ১ রান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তারা হারিয়ে বসে অধিনায়ককে। গোল্ডেন ডাক নিয়ে সাজঘরে ফেরেন বাবর। হুক খেলতে গিয়ে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে ভুবনেশ্বরকে ক্যাচ দেন রিজওয়ান। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩২ রান নিতে পারে পাকিস্তান। উইকেট টিকিয়ে রেখে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন শান মাসুদ আর ইফতিখার আহমেদ। ১০ ওভারে পাকিস্তানের বোর্ডে উঠে ৬০ রান। সেখান থেকে উইকেট টেকানোর চেষ্টা করেন ইফতিখার আহমেদ আর শান মাসুদ। মাসুদ আর ইফতিখারের ৫০ বলে ৭৬ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন মোহাম্মদ শামি এলবিডব্লিউয়ে। ফিফটি করেই আউট হয়ে যান ইফতিখার। তিনি ফেরার পর দ্রুত আরও কয়েকটি হারিয়ে বসে পাকিস্তান। শাদাব খান (৫), হায়দার আলি (২), মোহাম্মদ নওয়াজ (৯) আর আসিফ আলি (২) ফেরেন তাড়াহুড়ো করে। ২৯ রান তুলতেই ৫টি উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে পাকিস্তান। শেষদিকে লোয়ার অর্ডারের শাহিন শাহ আফ্রিদি ৮ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১৬ আর হারিস রউফ ৪ বলে ১ ছক্কায় করেন ৬। শান মাসুদ ৪২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ৩টি করে উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া আর আর্শদ্বীপ সিং।
এদিন অন্য ম্যাচে শ্রীলংকা ৯ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে। আর সুপার টুয়েলভে উঠে প্রথম ম্যাচেই ধাক্কা খায় আয়ারল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলংকাকে ১২৯ রানের লক্ষ্য দেয় তারা। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় ৫ ওভার হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে দাসুন শানাকার দল। রান তাড়া করতে নেমে নবম ওভারে দলীয় ৬৩ রানে আউট হন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। এরপর অবিচ্ছিন্ন ৭০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কা। ৪৩ বলে ৬৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন কুশল মেন্ডিস। ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন আসালাঙ্কা। এর আগে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৮ রান সংগ্রহ করে আয়ারল্যান্ড। হ্যারি টেক্টর ৪২ বলে ৪৫ ও পল স্টারলিং ২৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন। জর্জ ডকরেল ১৪ ও লরকান টাকার ১০ রান করেন। এ ছাড়া আর কোনো আইরিশ ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। শ্রীলংকার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মহেস থিকসানা দুটি করে উইকেট পান। বিনুরা ফার্নান্দো, লাহিরু কুমারা ও চামিকা করুণারত্নের শিকার একটি করে উইকেট। ৪৩ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরষ্কার জিতেছেন কুশল মেন্ডিস।
