আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা হলো না। সে সাথে পাওয়া হলো না পুরো ৩০ পয়েন্ট। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে বিধ্বস্ত আফগানরা ফিরল দুর্দান্তভাবে। বল হাতে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন গুড়িয়ে দেওয়ার পর ব্যাট হাতে টাইগার বোলারদের কচু কাটা করেছে আফগান ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটে-বলে আগের দুই ম্যাচে হারের প্রতিশোধটা যেন কড়ায়-গন্ডায় তুলে নিল তারা। সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শুধু হোয়াইটওয়াশই এড়ায়নি আফগানরা তুলে নিয়েছে ১০টি পয়েন্টও। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাসটাও বাড়িয়ে নিয়েছে নবী-রশিদরা।
দিনের শুরুতে রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, ফজল হক ফারুকী, আজমতউল্লাহরা দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে। আর শেষ বেলায় ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছে গুরবাজ, রিয়াজ, রহমত শাহরা। আগের ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি করা লিটন দাশ এই ম্যাচেও সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ফিরেছেন। কিন্তু সে পথে হাটেননি রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তুলে নিয়েছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। আর সে সেঞ্চুরির সুবাধে তার দল পেয়েছে সহজ এক জয়। যা আফগানদের জন্য স্বস্তির।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা মন্দ করেনি। ধীর গতিতে শুরু করলেও দুই ওপেনার তামিম এবং লিটন ৪৩ রান যোগ করেছিল। ২৫ বলে ১১ রান করে আফগান পেসার ফজল হক ফারুকীর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন তামিম। টানা তৃতীয় ম্যাচে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন তামিম। তাও ফজল হক ফারুকীর বলে। দ্বিতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়ে বেশ ভালই এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু ৬১ রান যোগ করার পর আজমতউল্লাহর বল উইকেটে টেনে এনে বোল্ড হন সাকিব। ৩০ রান করে ফিরেন সাকিব। আগের ম্যাচে লিটনকে নিয়ে রেকর্ড গড়া মুশফিকও ব্যর্থ হলেন এ ম্যাচে। রশিদ খানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক ফিরেন ৭ রান করে। এরপর উইকেটে আসেন লোকাল বয় ইয়াসির আলি রাব্বি। ক্যারিয়ারের অভিষেক ম্যাচে রানের খাতা খুলতে না পারা রাব্বিকে ব্যাট করতে হয়নি দ্বিতীয় ম্যাচে। তাই গতকাল দায়িত্ব নেওয়ার একটা সুযোগ এসেছিল রাব্বির সামনে। কিন্তু সে সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারলেন না চট্টগ্রামের এই তরুণ। ফিরেছেন এক রান করে। এরপর লিটনের সাথে জুটি বাধেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ২৮ রানের বেশি যোগ করতে পারলেন না। সতীর্থদের আসা যাওয়া দেখতে থাকা লিটন এবার নিজেই দিলেন রণে ভঙ্গ। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ফিরতে হয়েছে লিটনকে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা লিটন এই ম্যাচে ফিরেছেন ৮৬ রান করে। তার ১১৩ বলের ইনিংসে ৭টি চারের মার ছিল। এরপর মাহমুদউল্লাহ একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। আর অপর প্রান্তে কেবলই সতীর্থদের আসা যাওয়া দেখেছেন। প্রথম ম্যাচে বীরত্ব দেখানো আফিফ-মিরাজও পারেননি এই ম্যাচে কঠিন সময়ে দলের হাল ধরতে। ১৫৩ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে ৩৯ রানে। একপ্রান্ত আগলে রাখা মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ২৯ রান করে। আর বাংলাদেশ থেমেছে ১৯২ রানে। আফগানিস্তানের পক্ষে রশিদ খান নিয়েছেন ৩৭ রানে ৩ উইকেট।
১৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই আফগান ওপেনার দারুণ শুরু করেন। রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং রিয়াজ হাসান মিলে দ্রুত ৭৯ রান তুলে নেয় উদ্বোধনী জুটিতে। সাকিব ভাঙ্গেন সে জুটি। ৩৫ রান করা রিয়াজ হাসানকে স্টাম্পিং করে ফেরান সাকিব। রহমত শাহকে নিয়ে আরো একশ রানের জুটি গড়েন গুরবাজ। মেহেদী হাসান মিরাজ এসে ভাঙ্গেন সে জুটি। মুশফিকের স্টাম্পিং হয়ে ফিরেন ৬৭ বলে ৪৭ রান করা রহমত শাহ। ততক্ষণে তিনি দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের একেবারে কিনারায়। দলের জয় আর গুরবাজের সেঞ্চুরির জন্য যখন অপেক্ষা করছিল আফগানরা তখনই মিরাজের আঘাত। ফেরালেন হাশমতউল্লাহকে। তখনো অপেক্ষায় গুরবাজ তার সেঞ্চুরির জন্য। পরের ওভারে কাঙিত সেঞ্চুরি তুলে নেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। আগের দুটি সেঞ্চুরি যথাক্রমে নেদারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। শেষ পর্যন্ত ৫৯ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন গুরবাজ। এই ওপেনার অপরাজিত ছিলেন ১১০ বলে ৭টি চার এবং চারটি ছক্কার সাহায্যে ১০৬ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।