শেখ হাসিনা : সামাজিক নিরাপত্তায় দীপ্র কিংবদন্তী

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

মুক্তির মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর সুদীর্ঘ সুমহান নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাঙালি জাতির স্বাধীন সত্তার পরিপূর্ণতার এই দিনে লক্ষ কোটি মানুষের সম্মুখে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত ও আবেগাপ্লুত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আজ সোনার বাংলার কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা, আশ্রয়হারা। তারা নি:সম্বল। … নেতা হিসেবে নয়, ভাই হিসেবে আমি আমার দেশবাসীকে বলছি, আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে-পূর্ণ হবে না।’ ৯ এপ্রিল ১৯৭২ সালসহ বহু ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাওয়া যেতে পারে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না হলে রাজনৈতিক স্বাধীনতাও ব্যর্থ হয়ে যায়।’
১৯৭২ সালের পহেলা মে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দারিদ্র-শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সামাজিক নিরাপত্তার খাতসমূহ সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রায় ৭০ কোটি টাকার বকেয়া সুদ-খাজনা ও কর মাফ করে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন, লবণ উৎপাদনে আবগারি শুল্ক, নির্যাতনমূলক ইজাদারি প্রথা বিলুপ্ত করে ছিলেন। প্রায় ১৬ কোটি টাকার টেস্ট রিলিফ বিতরণ, দরিদ্র চাষিদের ১০ কোটি টাকার তাকাবি ঋণ, ১ লাখ ৯০ হাজার টন সার, ২ লাখ মণ বীজ ধান, সমবায়ের মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ কোটি টাকা অনুদান, শ্রমিক-কর্মচারী-নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নানামুখী আর্থিক প্রণোদনাস্বরূপ ৩০-৩৫ কোটি টাকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দিয়েছেন। খাদ্য-কাপড়-গৃহহীন চাষি-তাঁতী-কামার-কুমোর-শ্রমিক ও মজলুম জনতার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে শুধু অঙ্গীকার ব্যক্ত করেননি; দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কদর্য ষড়যন্ত্রে সপরিবারে নৃশংস শাহাদাৎ বরণ পর্যন্ত জীবনমান গণমানুষের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম-মেধা ও প্রজ্ঞার অপরিসীম বিচক্ষণতায় প্রায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন।
তাঁর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মানুষ যেন পর্যাপ্ত খাদ্য-আশ্রয় ও উন্নত জীবনের অধিকারী হয়। ১৯৭২ সালে পবিত্র সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভাবগ্রস্ত মানুষের সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৯৭-৯৮ সালে সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে দেশে সর্বপ্রথম বয়স্কভাতা এবং ১৯৯৮-৯৯ সালে বিধবা, নিগৃহীত মহিলা ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীসহ নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। পরবর্তী পর্যায়ে এই কার্যক্রমের অধীনে প্রতিবন্ধী শিক্ষা-সেবা-সাহায্য কেন্দ্র, উপবৃত্তি, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর যেমন হিজড়া-বেদে-চা শ্রমিকসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অসহায়দের নানাবিধ সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন যে, দারিদ্র বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসকরণে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র ২০১৫ প্রণীত হয়। সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক জীবনচক্র পদ্ধতির ভিত্তিতে বিন্যস্ত শ্রেণিভিত্তিক শিশুদের ও কর্ম উপযোগী নাগরিকদের জন্য কর্মসূচি, বয়স্কদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র বিশেষ কর্মসূচিসমূহ অন্যতম। ১১ জুন ২০২০ গণমাধ্যম প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ সালে এই খাতে ৭৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা করা হয়। করোনা অতিমারির ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে ২৮.৫ শতাংশ বৃদ্ধি মোট বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ বা জিডিপির ৩.০১ শতাংশ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। সমাজকল্যাণ অধিভুক্ত বয়স্কভাতা কর্মসূচির আওতায় ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। বর্তমান ২০২০-২১ অর্থবছরে বয়স্কভাতা ভোগীর সংখ্যা ৫ লক্ষ বৃদ্ধি করে ৪৯ লক্ষ উদ্দিষ্ট জনগণের জন্য ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯-২০ অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০০ টাকা হারে ১৭ লক্ষ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা দুস্থ মহিলাকে ভাতা প্রদান করা হয়। ঐ বছরে এই খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে মোট ২০.৫০ লক্ষ উল্লেখ্য সুবিধাভোগীর অনুকূলে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৯৯৯-২০০০ সালের বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে গড় বৃদ্ধির হার হচ্ছে ২০.৩৮ শতাংশ। পল্লী এলাকার দরিদ্র মা’দের আর্থিক সহায়তা প্রদানে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রথমবার মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু করা হয়। ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ উভয় অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ৭৬৩.২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ভাতা প্রদানের হার ৩০০ টাকা হলেও পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি করে ৮০০ টাকা এবং ভাতা প্রদানের মেয়াদ ২৪ মাস থেকে ৩৬ মাস করা হয়।
শহরাঞ্চলে কর্মজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য ও তাদের গর্ভস্থ সন্তান বা নবজাতকের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তার উদ্দেশ্যে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে কর্মজীবী ও ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ২.৭৫ লক্ষ সুবিধাভোগীর বিপরীতে ২৭৪.২৮ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা আছে। ২০১৯-২০ সালে যা ছিল ২৭৩.১১ কোটি টাকা এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিল ২.৭৫ লক্ষ জন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মানোন্নয়নে সরকার বর্তমানে মাসিক ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী এবং একই হারে দুটি উৎসব ভাতা প্রদান করছে। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা যেমন: বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম ও বীরপ্রতীকদের সম্মানী বাবদ যথাক্রমে ৩৫ হাজার, ২৫ হাজার, ২০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরেও সমপরিমাণ বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতার ক্ষেত্রে ভাতার হার, উপকারভোগীর সংখ্যা এবং মোট বরাদ্দ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে এ কার্যক্রমে জনপ্রতি ভাতার হার ৭৫০ টাকা, উপকারভোগীর সংখ্যা ১৮ লক্ষ এবং মোট বরাদ্দ ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ সালে ০.১৫ লক্ষ উপকারভোগীর জন্য ৪৮০.১৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছিল। চলতি বছরে একই সংখ্যক উপকারভোগীর জন্য ৪৮০.৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (খাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (খাবিটা), ভিজিএফ, টিআর, জিআর ও অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির জন্য যথাক্রমে ১ হাজার ৪৩.০৪ কোটি, ১ হাজার ৫০০ কোটি, ৯৪০.১০ কোটি, ১ হাজার ৩৯৯.৬২ কোটি, ৩ হাজার ৬২.৫৮ কোটি ও ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দারিদ্র দূরীকরণ এবং আপামর জনগণের মুখে স্বপ্নের হাসি ফোটানোর উদ্দেশ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যাপক প্রসারমানতা কার্যকর করার প্রায়োগিক নির্দেশনা বহুকাল পূর্বে অর্থিত করেছেন। তাঁর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল প্রায় একযুগ ধরে দেশের সরকার পরিচালনা করছে এবং সরকার প্রধান হিসেবে তাঁরই কন্যা অদম্য অগ্রগতিতে দেশকে উন্নয়নের উঁচুমাত্রিকতায় পৌঁছুতে অবিচল নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দেশকে বিশ্বপরিমণ্ডলে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ মর্যাদায় সমাসীন করেছেন। ধরিত্রী-সমুদ্র-মঙ্গা-পরিবেশ-সততা-মহাকাশ-সীমান্ত বিজয়ী জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জননী হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃত। মিয়ানমার সরকারের বর্বরতম গণহত্যা ও নির্যাতনে নিস্পিষ্ট প্রাণ রক্ষার্থে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় বার লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান ও সামগ্রিক ভরণপোষণে দেশ-সরকারের অবর্ণনীয় মানবিক দৃষ্টান্ত বিশ্বনন্দিত। করোনা অতিমারির দুঃসময়ে কঠিন বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার আশঙ্কিত প্রভাবকে স্রষ্টার অপার মহিমায় সংশয়মুক্ত করে সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং একই সাথে অর্থনীতিকে সচল রাখার সমুদয় উপাশ্রয় করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। অতিসম্প্রতি করোনা মুক্তির ভ্যাকসিন সংগ্রহ এবং ক্রয়ে অভূতপূর্ব কূটনৈতিক সাফল্য দেশের জনগণের আস্থাকে প্রবল অটুট রাখতে অতিশয় শক্তিমান হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনকালে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ৪৯২ উপজেলায় সমন্বিত পন্থায় ৬৬ হাজর ১৮৯টি গৃহহীন পরিবারের হাতে জমি ও সেমিপাকা বাড়ির দলিল প্রদান সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শুধু বিরল নয়; দৃশ্যমান মানবকল্যাণে বিশ্বশীর্ষ পটভূমি নির্মাণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মসূচি উদ্বোধন প্রাক্কালে ‘মুজিববর্ষে এটিই বড় উৎসব’ উচ্চারণে বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের দীর্ঘসময় গৃহহীন এসব দরিদ্র মানুষের কাছে শুধু নন; সমগ্র দেশবাসীর কাছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার প্রাগ্রসর মুকুটে অভিনব উপমা-পালকে অভিষিক্ত হয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে গৌরবদীপ্ত রূপকল্প ২০২১ প্রমুদিত রাজসিক অর্জন ও বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে অন্তর্ভুক্তির পদার্পণ পূর্বে এখনো স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এই গৌরব শুধু বাংলাদেশের নয়; বিশ্বের সকল নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-দরিদ্র দু:খী মানুষের বিজয় হিসেবেই সুবাসিত।
মহান মুজিব বর্ষেই প্রমিত বিরল ও বিস্ময়কর অধ্যায় রচনায় উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থাকল্পে দেশের সকল গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে দেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে- নি:সন্দেহে তা বলা যায়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশের ভিক্ষুক-ছিন্নমূল-বিধবা-দিনমজুর-বেদে-দলিত-হরিজনসহ বহুকালব্যাপী ভাসমান এসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে ‘স্বপ্নের স্থায়ী নীড়’ উপহার যথার্থ অর্থে সামাজিক নিরাপত্তায় জীবন্ত কিংবদন্তির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারও বিশ্বনন্দিত হয়েছেন। এই যোগ্যতম তারিণীর পক্ষ থেকে বিঘোষিত প্রায় ৭০ হাজার এবং আগামী মাসে আরও এক লাখ জমিসমেত গৃহ প্রদানের অপরিমেয় আনন্দ বার্তায় পুরো বাংলার মাটি ও মানুষ নবতর ঐকাত্ম্যে উদ্বেলিত।
১৯৭২ সলের ৯ এপ্রিল স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগের ১ম কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে অমিয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছিলেন। সরকার শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার নয়, এটি দেশের সমগ্র জনগণ বা সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সরকার। তিনি কঠিন উচ্চারণে নেতা-কর্মীদের সতর্ক ও প্রতিষ্ঠানকে সুশৃঙ্খল করতে বলেছেন। বিরোধী দলের প্রতিকূল অবস্থান তুলনায় সরকারি দলের কঠোরতম রাজনৈতিক পন্থায় অবিচল থেকে গঠনমূলক কাজে মনোনিবেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। অত্যাচার-অবিচার-জুলুম-লুটপাটকে সংহার করে মানুষকে সেবা দিয়ে মন জয় করার উপলব্ধিতে প্রজ্ঞাবান হতে বলেছেন। তিনি বার বার স্মরণ করে দিয়েছেন যে, ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্মের সার্থকতা অনুধাবন প্রদীপ্ত করতে বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘লোভের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। লোভ যেখানে ধ্বংস সেখানে। একবার যদি কেউ লোভী হয়ে যায়, সে জীবনে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। শুধু আপনার মুখে কালি দেবেন না, কালি দেবেন সেই দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুখে। যেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ স্বাধীন হয়েছে।’
দুর্ভাগ্যজনক হলে সত্য; সম্প্রতি গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে দেশে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ঘৃণ্য মোশতাক নামক ঘাতকদের বিনাশ সম্পূর্ণ হয়নি। এখনও ছদ্মবেশে নানা অপকৌশল ও ছলচাতুরীর মাধ্যমে পাপাচার-কদাচার-মিথ্যাচারে পারদর্শী প্রতারক দল অবৈধ-অনৈতিক পন্থায় পদ-পদবী-পদক দখলে নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জনশ্রুতি মতে কুৎসিত আর্থিক ও অন্যান্য বিনিময় প্রথায় লবিং-তদবির বাণিজ্যের বদান্যতায় অনুপ্রবেশকারীরা অন্ধকারের পরাজিত অশুভ শক্তির সাথে গোপন আঁতাতে দেশ ধ্বংসের নানা কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত। দেশপ্রেমিক-সৎ-মেধাবী-যোগ্য-দক্ষ ব্যক্তিদের অবমূল্যায়নে কোণঠাসা করা হলে আগামী দিনের বাংলাদেশ প্রোজ্জ্বলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্থবহ প্রতিষ্ঠায় নিখাদ সোনার মানুষের সঙ্কট অবশ্যই অনুভূত হবে।
কর্ণাশ্রিত অপসংস্কৃতি পরিহারে বস্তুনিষ্ঠ যাচাই-বাছাই পরিমাপে ত্যাগী-পরিক্ষিত ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়ন সময়ের দাবী। সচেতন মহলের ধারণা; এর অন্যথা হলে অর্জিত সকল দৃশ্যমান সাফল্য অদূর ভবিষ্যতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দুরাগ্রহ প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা-অন্তরায়সমূহকে সংহার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণ অবশ্যই নতুন বিজয় পতাকা উড্ডীন করবেই। অতিসম্প্রতি অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী জ্ঞানতাপস অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের অমূল্য বাণী বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তাঁর বক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়েছে; বর্তমানে ভারতবর্ষে বিরাজিত আদর্শের সঙ্কটে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও আদর্শ অনন্য দিশা হতে পারে। মূলত এই সত্যবাণী শুধু ভারতবর্ষে নয়; পুরো বিশ্বকে আদর্শের মাপকাঠিতে উচ্চতম গন্তব্যে পৌঁছুনোর উৎকৃষ্ট নিয়ামক হতে পারে- এটিই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ