শুভ কামনায় এগিয়ে নিয়ে যাই নতুন বছরকে

জোনাকী দত্ত | শনিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

বৈশাখ হলো বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রথম মাস এবং শকাব্দ বা ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গের দ্বিতীয় মাস। ‘বৈশাখ’ শব্দটি এসেছে বিশাখা নামক নক্ষত্রের নাম থেকে। এই মাসে বিশাখা নক্ষত্রটিকে সূর্যের কাছে দেখা যায়। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। দুই মাস পর পর এখানে ঋতু পরিবর্তন হয়। বাংলা বারো মাসের মধ্যে প্রথম মাস হলো বৈশাখ। এই বৈশাখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরো অনেক মহান ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন। কৃষি কাজের সুবিধার জন্য মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ সালে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ তার সিংহাসন আরোহণের দিন হতে তা কার্যকর হয়। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা নববর্ষ নামে পরিচিত হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ই মার্চ ঢাকায় ইডেন হোটেলে বাঙালি মুক্তির ঠিকানা আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন হয়েছিল “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের এ কাউন্সিলে ছয় দফা দাবি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের পর পাক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের বেতার টেলিভিশনে রবীন্দ্র সংগীত প্রচার বন্ধ করে। কিন্তু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বৈশাখবর্ষাকে সঙ্গে নিয়ে হাজার বিরোধিতার মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনা বিকশিত হতে থাকল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দেশের চিরায়ত ঐতিহ্য লোকজ শিল্প ও সংস্কৃতির উপস্থাপনের মাধ্যমে সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে একত্র করার লক্ষ্যে ১৯৮৫ (মতান্তরে ১৯৮৬) সালে যশোরে ‘চারুপীঠ’ নামের একটি সংগঠন প্রথম পদযাত্রার মাধ্যমে নববর্ষকে বরণ করতে বৈশাখী শোভাযাত্রার আয়োজন করে।এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা শহরে প্রথম ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কিছু শিক্ষার্থী পরিকল্পনা করে অমঙ্গলের বিরুদ্ধে মঙ্গলের প্রত্যাশায় প্রতিবাদ জানাতে আয়োজন করবে শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। বৈশাখে বর্ষবরণ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, বৈশাখী মেলা এবং আরো নানা উৎসবের উদযাপন করা হয়। বাংলা সনের প্রথম মাস এই বৈশাখের আগমনী বার্তা, রূপ বৈচিত্র্য এবং মানুষের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা, উৎসব নিয়ে বাংলা সাহিত্যের কবিরা কবিতা লেখেন। একটি সাধারণ গবেষণায় জানা যায় বাংলায় এই বৈশাখ নিয়ে ছোট বড় ২৮৭৪টি কবিতা রচনা করা হয়েছে। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ নিয়ে সৃজনশীল ঋতু গ্রীষ্ম বিচিত্র ফুল, রসালো ফলের সম্ভার আর নানা শাক সবজি আমাদের উপহার দেয়। এই সময় নতুন ফসল ঘরে ওঠে। তবে অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড় এসে তান্ডব চালায় প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর। বাংলা ১৪৩১ সাল বাঙালির জীবনে আনন্দ বয়ে আনুক। সকল অপশক্তি, হিংসাবিদ্বেষ, অহংকার, ভেদাভেদ, দুশ্চিন্তা, হতাশা, দুঃখ দূরে যাক। মানুষ মানুষের পাশে থাকুক। প্রতিটি মানুষ নতুন উদ্যমে, নতুন আশায় পেছনে সব ব্যর্থতাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে এগিয়ে যাক এই বৈশাখে এটাই হোক সকলের অঙ্গীকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেশ বাঁচান
পরবর্তী নিবন্ধনাদেরা বানু : একজন অদম্য,সাহসী ও লড়াকু নারী