শুনলেন ভিটেবাড়ি ও জমি হারানো মানুষের কথা

সন্দ্বীপে বিশেষজ্ঞ দল

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি | রবিবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

সন্দ্বীপে এসেছে জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও সাংবাদিকদের একটি দল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্বীপের আর্থসামাজিক পরিবর্তন নিয়ে তারা সন্দ্বীপের সুশীল সমাজ, স্থানীয় সাংবাদিক ও নদী সিকস্তি মানুষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ সময় নদী সিকস্তি মানুষেরা তাদের ভিটেবাড়ি ও জমি হারানোর কথা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হন। মো. মানিক নামে রহমতপুর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা তার বড় মেয়েকে নিয়ে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বিশিষ্টজনদের কাছে। তিনি জানান, একদিকে তার ভিটে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তার মেয়ে প্রসব বেদনায় ছটফট করছিল। এ অবস্থায় কাঠের ছোট ট্রলারে করে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে কর্ণফুলী নদীর মুখের কাছাকাছি আসতেই পরপর তিনটি বড় ঢেউ এসে নৌকায় আছড়ে পড়ে। তার মেয়ে মৃত সন্তান প্রসব করে। তখন তিনি আর চট্টগ্রাম না গিয়ে মেয়েকে নিয়ে সন্দ্বীপে ফিরে আসেন। তার হারানো ভিটে এখন আবার জেগে উঠলেও নিজ ভূমির মালিকানা এখনো বুঝে পাননি বলে জানান তিনি।

হরিশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম সাতবার নদী ভাঙনের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান। নদী সিকস্তি মানুষের ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসার একাধিক ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন বলে জানান তিনি। সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পুনর্বাসন সমিতির সদস্য সচিব মনিরুল হুদা বাবন বিশেষজ্ঞদের ১৯৫৪ সালের জরিপ অনুযায়ী সন্দ্বীপের আয়তন ও ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেন। এছাড়া নদী ভাঙনের ফলে এককালের ৬০৩ বর্গমাইলের ৬০ মৌজার সন্দ্বীপ বর্তমানে ৮২ বর্গমাইলের ৩১ মৌজায় এসে ঠেকেছে বলে জানান। ভাসানচর, স্বর্ণদ্বীপ, খাসের হাট ও কবির হাট সন্দ্বীপের অংশ ছিল বলেও জানান তিনি। নদী সিকস্তি মানুষের কথা শুনে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শামসুদ্দৌহা বলেন, সন্দ্বীপের নদী ভাঙনের এ সমস্যা কতটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আর কতটা প্রাকৃতিক কারণে তা নিয়ে আরো গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নদীগর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়া মানুষের কথা শুনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব জেগে ওঠা এসব ভূমি নিয়ে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণের উপর জোর দেন। এ পরিকল্পনায় অবশ্যই ভূমির প্রকৃত মালিকদের বিষয়টি থাকতে হবে মত প্রকাশ করেন তিনি।

সাংবাদিক সালেহ নোমানের সঞ্চালনায় ও নিরাপদ নৌ পথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিন রসুল বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নদী সিকস্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল আকতার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোশাররফ হোসেন লিটন, বিএনপি নেতা আজমত আলী বাহাদুর, জেগে ওঠা ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব ফোরকান উদ্দিন রিজভী, হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপী, খোদাবঙ সাইফুল, খাদেমুল ইসলাম, মিলাদ উদ্দিন মুন্না, মিজানুর রহমান টিটু ও ইব্রাহিম হোসেন।

জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গওহর নঈম ওয়ারা, রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, মহসিনুল হাকিম, জাকির হোসেন, আলমগীর কবীর, সামসুদ্দীন ইলিয়াস ও আমিনুল ইসলাম মিঠু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় মাদ্রাসার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে