শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির একজন সম্রাটের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

হাবীবুর রহমান

১০ বছরেও পরিশোধ করেননি ঋণ | সোমবার , ১২ জুন, ২০২৩ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর টেরীবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাট ডাচ বাংলা ব্যাংক ও আর নিজাম রোড শাখা থেকে ঋণ নেন। পরে যা খেলাপিতে পরিণত হয়। এজন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থঋণ মামলা দায়ের করলে ডিক্রি ঘোষণা করে আদালত। ডিক্রিতে বলা হয়, ১২ শতাংশ হারে সুদসহ ৬০ দিনের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু তিনি এই সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন।

এরপর ঋণ আদায়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয় জারি মামলা। এতেও লাভ হয়নি। খেলাপি হওয়া বিশাল অংকের ঋণ পরিশোধ হয়নি। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১০ বছর। এমন পরিস্থিতিতে মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সের মালিক আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাটকে পাঁচ মাসের দেওয়ানী আটকাদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এই আদেশ দেন। ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের দেওয়া আদেশে উঠে আসে, ২০১৩ সালে সিদ্দিক ট্রেডার্স ও প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলাটি দায়ের হয়। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি দোতরফা সূত্রে মামলায় ডিক্রি হয়। ডিক্রি মূল্য ৬ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। মামলা দায়েরের সময় থেকে ১২ শতাংশ হারে সুদসহ উক্ত টাকা ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে ডিক্রিতে বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় একই বছরের ১৯ আগস্ট সুদ ও খরচসহ মোট ১১ কোটি ৯১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ১০১ টাকা আদায়ের দাবিতে জারি মামলাটি দায়ের হয়। ঋণের বিপরীতে ক্রোকবদ্ধ সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য দুইবার নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হলেও আগ্রহী ক্রেতার অভাবে বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি।

আদালতের দেওয়া আদেশে বলা হয়, ২০২০ সাল থেকে বার বার সময়ের আবেদন করে ঋণ পরিশোধে বিবাদী কালক্ষেপণ করছেন। ঋণ পরিশোধে তিনি সদিচ্ছার প্রমাণ দেননি। চলমান বিআরপিডি সার্কুলারের আওতায় ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করে সুদ মওকুফ সুবিধার জন্যও আবেদন করেননি বিবাদী। তিনি একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। জাতীয় সংসদে ঘোষিত শীর্ষ ২০ জন ঋণখেলাপির মধ্যে তিনি অন্যতম। এমন অবস্থায় বিবাদীর বিরুদ্ধে দেওয়ানী আটকাদেশ প্রদান না করলে খেলাপি ঋণ আদায় হবে না।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, ১১ মে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিবাদীর বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালত আইনের ২৩৪ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানী আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করা হয়। তখন আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ধার্য তারিখে (১১ জুন) দেড় কোটি টাকা দাখিল করবে বিবাদী। কিন্তু দেখা যায়, বিবাদী মাত্র ১৫ লাখ টাকা পেঅর্ডারমূলে দাখিল করেছেন এবং অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য সময়ের আবেদন করেন। দীর্ঘ এক যুগের পুরনো খেলাপি ঋণ হওয়ায় এবং ঋণ পরিশোধে যথেষ্ট সুযোগ লাভ করা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে সদিচ্ছার প্রমাণ না দেওয়ায় বিবাদীর উক্ত সময়ের আবেদন নাকচ করে দিয়ে এবং ব্যাংকের আবেদন আমলে নিয়ে বিবাদী আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানী আটকাদেশ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক।

আদালত সূত্র জানায়, বিবাদী আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাটের পক্ষে তার আইনজীবী আদালতকে বলেন, বিবাদী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি নন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিবাদীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করায় তিনি ব্যবসাবাণিজ্য করতে পারেননি। এতে তিনি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে তিনি আগ্রহী। ইতোমধ্যে ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। ঋণের বিপরীতে মূল্যবান সম্পত্তি ক্রোকবদ্ধ রয়েছে। সময় পেলে বিবাদী ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করে দেবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার সৈকতে ফের বিষাক্ত লাল জোয়ার
পরবর্তী নিবন্ধদেবরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ, ভাবি কারাগারে