এখনকার এই সময়টা ভারী মিষ্টি, চমৎকার। বলা চলে নাতিশীতোষ্ণ। শীত আসি আসি করছে। সাথে সাথে উৎসবের চরণধ্বনি। এই মনোরম আবহাওয়ায় পিঠা পার্বণ,নানারকম মেলা, পিকনিক লেগেই থাকে। সবচেয়ে বড় উৎসব “বিয়ে“র ধুমধাম মহানন্দে ঢেউ তুলে তুলে ভেসে বেড়ায়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী … এই চার মাস বিয়ের জন্য মোক্ষম সময়। পারতপক্ষে জরুরী না হলে কেউ গরমকালে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চায় না। গরমে, ঘামে ত্যানা ত্যানা হয়ে যায় সব। নতুন বউ এবং অন্য মেয়েদের মেক আপ গলে গলে পড়ে আর সব চাইতে বড় বিষয় খাবারে গন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
তাই শীতের কুয়াশা মাখা আমেজে কাচ্চী বিরিয়ানির মৌ মৌ সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এক বিয়ে উপলক্ষে কমপক্ষে চার চারটা বড় অনুষ্ঠান তো হয়ই। অনেকে আরও বেশী অনুষ্ঠান করে। উচ্চবিত্ত এবং বিত্তশালীদের বিয়ে মানেই জাঁকজমক, চাকচিক্য, আলোর ঝলকানী। বিয়ের ভেনু ছাড়াও ছেলে, মেয়ের বাড়িতে এবং সামনের রাস্তাতে আলোর চমকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এই সমস্ত ভ্যানুর বুকিং দিতে হয় প্রায় এক বছর আগে থেকে। অনেকে পুরো মাস ধরে নাচ,গানের অনুষ্ঠান করে। নামী দামী শিল্পীদেরও আনা হয়। আর খাওয়া দাওয়া… কাচ্চী, মুরগী, গরু, খাসী, গলদা চিংড়ি, বড় বড় মাছ, সব্জী আরো কত কি! মিষ্টি জাতীয় খাবারও থাকে হরেক রকমের। কিছু খাওয়া হয়, কিছু নষ্ট হয়। উৎসব আস্তে আস্তে মহা উৎসবে পরিনত হয়। আর বর বউ,আত্মীয় স্বজনদের জন্য শপিং, কেনাকাটা নামী দামী দোকানে চলতেই থাকে। শুধুমাত্র বউয়ের সাজ সজ্জা এবং গয়নাগাটিতেই নিম্নবিত্তের এক বিয়ের খরচের বেশী হয়ে যায়। মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের সম্মান রক্ষার্থে সাধ্যমত চেষ্টা করে। অল্প কিছু ধার দেনা হয়তো করে। কিন্ত নিম্নবিত্ত বেশীর ভাগ পরিবার যৌতুকের ধার দেনা মিটাতে মিটাতে নিঃশেষ হয়ে নিজেদেরই মরনের ফাঁদ তৈরী করে। মেয়ের বিয়ে দেওয়া এদের কাছে গলার ফাঁস। সামাজিক বৈষম্যের শিকার আজকাল স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবাই যদি একটু সচেতন হই, তবে জীবনের সবচেয়ে মায়াময়, মধুময় সময়গুলি ধনী, গরীব নির্বিশেষে অমৃত সুধা রসে সিক্ত হতে পারে।