বাংলাদেশে শীতকালে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, শীতকাল আসন্ন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। আমাদের এই মুহূর্ত থেকেই তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
শীতকালে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কতটা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং অণুজীব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ গত বছর শুরু হয়েছিল শীতকালেই, ডিসেম্বর মাসে। তখন দেখা গেছে, শীতপ্রধান দেশগুলোয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে সারা বিশ্বেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, শীতকালে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব আবার বেড়ে যেতে পারে। খবর বিবিসি বাংলার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আসছে শীতে করোনা মহামারি আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে শীতের আগে থেকে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে।
ড. সানিয়া বলেন, যে তাপমাত্রায় এই ভাইরাসটি বাড়ে, সহজে সংক্রমিত করতে পারে বা নিজের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে, শীতকাল সেটার জন্য আদর্শ। এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে, শীতকালে এই ভাইরাসের বিস্তার বেশি হতে পারে।
এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় হাঁচি, কাশি দেওয়া হলে বাতাসে জীবাণুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো অনেকক্ষণ ধরে ভেসে থাকে। গরমের সময় সেটা দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায়। শীতে অনেকক্ষণ বাতাসে থাকার ফলে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
করোনার জীবাণুর ক্ষেত্রে ভাইরাসের বাইরে যে আবরণ থাকে, যেটি জীবাণুর জেনেটিক কণাগুলোকে ঘিরে রাখে, সেটাকে বলা হয় লিপিড মেমব্রেন। এই আবরণটা তৈলাক্ত ধরনের। শীতকালীন পরিবেশে সেটা অনেকক্ষণ টিকে থাকতে পারে।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার জন্য বিশেষ করে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিশেষ অনুকূল। সূর্যের আলোয় যে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে তা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কিন্তু শীতের সময় অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ কম থাকে।
তবে শীতকালে করোনার বিস্তার বেশি হয়, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ সর্দিকাশির মতো অনেক রোগ শীতকালে বেড়ে যায়। কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে সাধারণ ফ্লু থেকে করোনাভাইরাসকে আলাদা করা। কারণ করোনা এবং সাধারণ ফ্লুর লক্ষ্মণ অনেক সময় একই রকমের হয়। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার সংখ্যা যেমন বাড়াতে হবে, সর্দিকাশির লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে মানুষকে আগ্রহী হতে হবে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনো প্রতিরোধী টিকা বাজারে আসেনি। তাই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একমাত্র উপায়। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, এসব ক্ষেত্রে লকডাউনের মতো বিষয় আপাতত ভাবা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, দেশে আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হয়ে ওঠার হার অনেক বেশি।