শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতার বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে

| বুধবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক বিশ্বে শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠ্য বইয়ে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও তা করা হচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সৃজনশীল কাজে উৎসাহ প্রদানের ব্যাপারে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞজনেরা বলেন, সৃজনশীল কাজ, কাজের পরিবেশ শিশুকে আবেগী স্বাস্থ্যবান করে গড়ে তোলে। যা পূর্ণ বয়সে তাকে সামাজিক দায়িত্ববান হতে সহায়তা করে।

আমরা জানি, মেধা ও সৃজনশীলতা এক নয়। অনেক মেধাবী মানুষ আছে যারা শিক্ষা জীবনে ভীষণভাবে সফল, কিন্তু ব্যক্তি এবং কর্মজীবনে সেইভাবে নয়। অনুরূপভাবে সৃজনশীল মানুষ তা ব্যক্তি ও কর্মজীবনে অনেক বেশি সফল। তাই সৃষ্টিশীল প্রতিটি মানুষ মেধাবী, তারা তাদের মেধার বহুমাত্রিক প্রয়োগের মাধ্যমে যেমনি আত্মতৃপ্ত হয় সেভাবেই মেধার বিকাশ ঘটায়। তাই বলা যায় মেধা বিকাশের স্বার্থে সৃজনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুকিশোরদের সৃজনশীলতা বিকাশে বাধা কোথায়! আমাদের অভিভাবকদের বেশিরভাগ পাঠ্যপুস্তকের পড়ার ওপর জোর দিয়ে থাকেন। শিশুরা নিজ থেকে কিছু করতে চাইলে সেটা অনেক সময় করতে দেয়া হয় না। তারা মনে করেন সেটা পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলা, গণিত ও ইংরেজির সাথে চারুকারু ও সঙ্গীত শিক্ষাও যে প্রয়োজন, তা বুঝতে চান না। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষক ও অভিভাবক উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি উদাসীন বা গুরুত্ব কম দেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুরা নিজে আগ্রহ করে কিছু বানালে বা কোন ছবি আঁকলে তাতে উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তে বাধা দেয়া হয়। ফলে পরবর্তীতে সে কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে না। শিশু সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকলে তার কল্পনাশক্তি বাড়বে, গুছিয়ে কথা বলতে পারবে, সুন্দর করে চিন্তা করতে পারবেএই বিষয়টা অনুধাবন করা হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক হাওয়ার্ড গার্ডনার তার ‘ফ্রেমস অব মাইন্ড : দ্য থিওরি অব মাল্টিপল ইন্টিলিজেন্সেস’ এ শিখনের ৮ ধরনের বুদ্ধিমত্তার কথা উল্লেখ করেছেন। তারমধ্যে শিশুর সৃজনশীল বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কোন কোন শিশু শোনা, বলা, নক্সা, ছবি, রেখাচিত্র, রূপকল্পনার সাহায্যে শেখে। কেউ আবার শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে হাতে কলমে কাজ করে শেখে। সঙ্গীত, ছড়া, গল্প, সঙ্গীতের তাল ও লয়ের মাধ্যমে সহজে শিখতে পারে। কোন কোন শিশু আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সহজেই শিখতে পারে। এ শিক্ষা সবই শিশুর সৃজনশীল বিকাশকে গতিশীল করে থাকে। শিশুদের বয়স ও সামর্থ অনুযায়ী খেলারছলে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

শিশু শিক্ষক ও অভিভাবকের কাছ থেকে উৎসাহ ও স্বীকৃতি পেলে সে সেই কাজে আরো বেশি আগ্রহী ও মনোযোগী হবে। পরবর্তীতে সে আরো ভালো কিছু করার উৎসাহ পাবে। সমাজে সাধারণ শিশুদের সাথে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সৃজনশীল বিকাশে সহযোগিতা করলে তারা পরিবারের ও সমাজের বোঝা না হয়ে জনসম্পদে পরিণত হবে। শিশুর সৃজনশীল বিকাশই পারে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ উপহার দিতে। তাই শিশুর সৃজনশীল বিকাশকে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকের সাথে শিক্ষকেরও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।

শিশুর জীবনমান বৃদ্ধির জন্য সৃজনশীলতাকে প্রাধান্যের ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই। ধরা যাক একজন শিশু খুব চঞ্চল, দুরন্ত। অভিভাবকের পেরেশানির অন্যতম কারণ এই শিশু। লেখা পড়ায় মন নেই, শুধুই দুষ্টমি, এই হচ্ছে শিশুটির অবস্থা। কোন এক স্কুল শিক্ষক খেয়াল করলেন সেই শিশুটি খুব চমৎকার অঙ্গভঙ্গি করতে পারে, অর্থাৎ দেহ ভঙ্গির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়কে ফুটিয়ে তুলে। স্কুলের কোন এক অনুষ্ঠানে সেই শিশুটিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হলো এবং সে তার সৃজনশীলতা উপস্থাপন করল। সবাই মিলে শিশুটিকে বাহবা দিল। শিক্ষক তখন তাকে বললেনতুমি যদি ভালভাবে লেখাপড়া কর ও দুষ্টমি না করে বাবা মার কথা শোন, তবে একদিন আরও বড় মঞ্চে কাজ করার সুযোগ পাবে। শুধুমাত্র শিশুটির সৃজনশীলতার একটু প্রয়োগে শিশুটি হয়ত পূর্ণ জীবনে বিখ্যাত মূকাভিনেতা হতে পারে।

শিশুকে সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে যে সুফলগুলো পাওয়া যায়; যোগাযোগে দক্ষতা বৃদ্ধিনিজের সৃজনশীলতার বৃদ্ধি ও নতুন ধারণা লাভের আশায় সৃষ্টিশীল কাজের বিনিময়ে শিশুর যোগাযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন; বিশেষত শিশু যখন কোন কাজ বা সৃষ্টি শুরু করে আকার, রং, উপাদান, বিষয়বস্তুসহ নানা সমস্যায় পড়ে এবং তা সে নিজের মেধাবলে সমাধান করে। সামাজিক ও আবেগময় দক্ষতা, নতুন কিছু করার আশায় শিশুটি অনেক বেশি সমাজ সচেতন হয়, যা সে তার আবেগ ভাবনায় বিচার করার প্রয়াস পায়।

মেরিয়েন কোল তার চিলড্রেনস আর্ট এ্যাডুকেসন গ্রন্থে বলেনশিশুর সৃজনশীল কাজ শিশুকে সিদ্ধান্ত প্রহণে দক্ষ করে। কারণ সৃষ্টির বৈচিত্র্যতার জন্য কী করব কী করব না, তা সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া প্রযুক্তি জ্ঞান ও নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্র তৈরি হয় শিশু সৃজনশীলতার মাধ্যমে। সবচেয়ে বড় যে প্রাপ্তি ঘটে তা হলো শিক্ষা জীবনের সফল্য। কারণ শিশুটি বুঝতে পারে আনন্দের এই প্রাপ্তির প্রদর্শন, প্রয়োগ, অর্জন তার সব কিছু ঘিরে আছে তার স্কুল বা বিদ্যাপীঠ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে