শিশু-কিশোরদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে

| বুধবার , ২ মার্চ, ২০২২ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু-কিশোরদের সামনে দেশের বিজয় ও অর্জনের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, এতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, প্রকৃত ইতিহাস জানলে শিশু-কিশোররা যেমন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, স্বার্থপরের মত নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে দেশের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু করার একটা আগ্রহের সৃষ্টি হবে, একটা চেতনা আসবে। যেটা আমাদের জন্য খুবই দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে করে তাদের মেধা, জ্ঞান, শৈল্পিক মন ও মনন বিকশিত হবে। তারা কে কোন ব্রান্ড পরবে বা ধন সম্পত্তির পেছনে কেবল ছুটে বেড়াবে না।
গত রোববার দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ওপর ভিত্তি করে আঁকা একটি স্ক্রল পেইন্টিংয়ের পনেরদিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
শিশুকিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য চাই তাদের উপযোগী সাহিত্য। যেটাকে আমরা শিশুসাহিত্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকি। যদিও শিশুসাহিত্য রচনা করা হয় আমাদের সমাজের ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের মজা ও আনন্দদানের উদ্দেশ্যে, তবু তার মধ্যে শিক্ষারও একটা সংযোগ থাকে। সে কারণে হরেন ঘটক বলেছেন, ‘শুধু তাকে আনন্দ দেওয়াই নয়, শিশুসাহিত্যের মাধ্যমে শিশুকে জ্ঞান-বিজ্ঞান- ইতিহাস এবং বিশ্ব-প্রকৃতিকে জানবার আগ্রহী করে তোলবার উদ্দেশ্যও এতে বর্তমান’। ফলে সুখলতা রাও ‘শিশুসাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা ও রুচি’ বিষয়ে লিখেছেন: ‘শিশুসাহিত্যের ভিতর দিয়ে শিশুর সরল মনে যে ছবি, যে-শিক্ষা, যে-আদর্শ পৌঁছায়, তাহা তাহার অজ্ঞাতসারে সেখানে নিজের ছাপ রাখিয়া যায় এবং ভবিষ্যতে তাহার শিক্ষা দীক্ষা, এমনকি রুচির উপরে প্রভাব বিস্তার করে। বিষয়টিকে আরো ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন প্রাবন্ধিক অজিত দত্ত। শিশুসাহিত্যের স্বরূপ নির্ণয়ের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “আমাদের সকলেরই আজ একথা উপলব্ধি করা দরকার যে, শিশুর শিক্ষা ও শিশুর সাহিত্যকে অভিন্ন করে না তুলতে পারলে, শিক্ষাও হবে অসম্পূর্ণ এবং সাহিত্যও হবে পঙ্গু। এই শিক্ষার মানে ‘সদা সত্য কথা কহিবে’ এবং ‘চুরি করা বড় দোষ’ মাত্র নয়। এ শিক্ষার মানে শিশু মনে যতগুলো সদ্‌বৃত্তি অপুষ্ট আছে, তাদের ফুটিয়ে তোলা। এই সদ্‌বৃত্তির মধ্যে আছে ভদ্রতা, সমবেদনা ও করুণা, আছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, নির্ভীকতা ও স্বাদেশিকতা, আছে দয়া, দাক্ষিণ্য ও মমতা, আছে মানবতাবোধ, আছে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সন্ধান। তেমনি আছে রসনাভূতি কাব্যবোধ ও সাহিত্যপ্রীতি, আছে অনুসন্ধিৎসা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনও কিছুকে বিচার করবার ক্ষমতা।”
এখানে বলে রাখা দরকার যে, বাঙালি শিশুর জন্য শিশুপাঠ কেমন হওয়া উচিত-সেই পথ প্রথম দেখালেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহপাঠী বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কার। ১৮৪৯ সালে ‘শিশু শিক্ষা’ গ্রন্থমালা লিখে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ এই লাইনটি ‘শিশু শিক্ষা’ প্রথম ভাগের ‘প্রভাতবর্ণন নামে চিরকালের শিশু কবিতার অংশ। ‘লেখাপড়া করে যে/ গাড়িঘোড়া চড়ে সে’-একসময়ে ছোটোদের কাছে এই আপ্তবাক্যটি আওড়ানো হতো। সময়ের পরিবর্তনে আজ এই বাক্যটি ভুলে যেতে বসলেও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এটি ছিলো বিদ্যা গ্রহণ বিষয়ে উজ্জীবনের মূলমন্ত্র। এই বইয়ে প্রচুর নীতিশিক্ষা রয়েছে। তবে কোনো বিশেষ ধর্মীয় নীতিবোধের চেয়ে সর্বজনীন মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিশুসাহিত্য সে হিসেবে আনন্দ আর শিক্ষার অপূর্ব সমন্বয়। প্রমথ চৌধুরীর ভাষায়, ‘শিশু শিক্ষার পুস্তকে যে বস্তু বাদ পড়ে যায়- অর্থাৎ আনন্দ-সেই বস্তু যুগিয়ে দেবার উদ্দেশ্যেই এ সাহিত্যের সৃষ্টি’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের জন্য এরকম সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা, তাদের ইতিহাস সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা অনেক দিবস পালন করলেও সেই দিবসের মাহাত্যটা কি, ইতিহাসটা কি অনেক সময় দেখা যায় আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারে না। কাজেই দেশের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে আরো নজর দেয়া দরকার। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ’৭৫ এর পর ২১ বছর তরুণ প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি বরং ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। ফলে অনেকেই আশপাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় পরিজন থেকে পরিপূর্ণ বা সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। শিশুকিশোরদের মানসিক খাদ্য হলো শিশুসাহিত্য। এই খাদ্য তার মনকে করে সতেজ, সবল। তার স্বপ্ন ও কল্পনাশক্তির বিকাশে উপভোগ্য শিশু সাহিত্যের কোনো বিকল্প নেই। নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারাও শিশুর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই শিশু দেশপ্রেমিকতার শিক্ষা পায় এবং দেশকে ভালোবেসে ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শেখে সারা পৃথিবী ও তার নানা বর্ণের, নানা গোত্রের বিচিত্র মানুষকে-তাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ঐতিহ্যকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে