শিশুদের নিরাপত্তাকে দিতে হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

| শনিবার , ১৮ জুন, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আমরা যতই বলি না কেন শিশুরা নিষ্পাপ, তবু এই নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুরা সমাজে নিগৃহীত হচ্ছে, সমাজিক বাস্তবতায় নানা ধরনের অত্যাচার এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমনকি খুন হচ্ছে। শিশু নির্যাতনের সাথে সাথে শিশু হত্যার ঘটনাসমূহও এতো বেড়ে গেছে যে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক। গত ১৬ জুন দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘কারা খুন করলো শিশুটিকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, তিন বছরের শিশুটির সাথে কারো শত্রুতা থাকার কথা নয়। সে কারো পথের কাঁটা হতে পারে- এ কথাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে শিশুটিকে খুন করা হয়েছে। শিশুটির পরিবারকে শায়েস্তা করার জন্যই যে এটা করা হয়েছে, তা নিশ্চিত। হতভাগ্য শিশুটির নাম ওয়ালীদ। গত বুধবার বিকেলে পূর্ব শিকারপুর হাঁচি মিয়ার বাড়িতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। প্রবাসী মো. জাবেদের পুত্র ওয়ালীদ। এ প্রসঙ্গে মদুনাঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান আজাদীকে জানান, বুধবার পূর্ব শিকারপুর হাঁচি মিয়ার বাড়ির মো. জাবেদের পরিবারের লোকজন পুকুরে দৈনন্দিন কাজ করতে গেলে কে বা কারা ঘরে থাকা ওয়ালীদকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন ঘরে এসে রক্তাক্ত ওয়ালীদকে দেখতে পায়। পরে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে দ্রুত নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, হত্যার কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে আঁতকে ওঠার কথা। শিশু হত্যার এমন ঘটনা শিউরে ওঠার মতোই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যাধুনিক এই সমাজব্যবস্থায় শিশু হত্যা ও শিশুর ওপর নির্যাতন আমাদের মনুষ্যত্বকে আজ প্রশ্নের সম্মুখীন করছে। তবে দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না শিশুহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা।

আমাদের সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়, যেটি শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হওয়ার কথা, নিজ ঘর; সেটিও এখন আতঙ্কের জায়গা হয়ে পড়েছে। সমপ্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে যে ‘নিজ ঘরেই ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। শাস্তি ও নিয়মানুবর্তিতার কথা বলে শিশুর ওপর এ নির্যাতন চালানো হয়। ঘরের বাইরেও শিশুরা মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুশ্রমে লঙ্ঘিত হচ্ছে অধিকার। পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল মাধ্যম শিশু নিপীড়নের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।’ জরিপে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কাজের জায়গা কিংবা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শিশু যতটা নির্যাতিত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নিজ গৃহে। প্রতিবন্ধী শিশুরা শুধু প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিবারে ও সমাজে নিগৃহীত হচ্ছে। প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, পরিবারে নির্যাতনের শিকার শিশুদের মধ্যে ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মেয়ে এবং ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ ছেলে। শিশুদের ৫৫ শতাংশ জানিয়েছে, তারা পরিবারের মধ্যে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। গৃহে ৫০ শতাংশ মেয়েশিশু এবং ৬০ শতাংশ ছেলেশিশু যৌন হয়রানির শিকার। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের নির্যাতনের পরিমাণ ৮২ শতাংশ। ঘরের বাইরে ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ, কর্মক্ষেত্রে ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অনৈতিক জীবনযাপন, ব্যক্তি স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, সামাজিক অস্থিরতা বাবা-মায়ের হাতে শিশু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কারণ। মানুষের সহনশীলতা কমে যাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে অস্থিরতা। এসব কারণে পারিবারিক অশান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবিশ্বাস, সন্দেহ তছনছ করে দিচ্ছে পারিবারিক বন্ধনকে। বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সততার চর্চা না থাকলে দাম্পত্য জীবনে কলহ আসবেই। আর সেই কলহ থেকে হত্যার ঘটনাও ঘটতেই থাকবে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে রাষ্ট্র, প্রশাসন, সমাজ ও ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে, যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশুদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরো বেশি তৎপর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে