শিশির ভেজা স্নিগ্ধ সকাল

সাইফুল্লাহ কায়সার | মঙ্গলবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

শুভ্রস্নাত শীতের সকাল। ঘাসের ডগায় কয়েক ফোঁটা শীতের শিশির মনে করিয়ে দেয় ‘জীবন সে তো পদ্মপাতার শিশির বিন্দু’। দিন শেষে শিশিরের শব্দের মতো যেমন সন্ধ্যা আসে, মুছে যায় পাখির ডানায়। রৌদ্রের গন্ধ, তেমনি শীত নেমেছে জনপদে। শীতের অলস সূর্যটা আরও কিছুটা হেলে পড়েছে দক্ষিণ আকাশে। রোদের তাপে নেই সেই রাগী উত্তাপের ছোঁয়া। হিম হিম ঠাণ্ডা আমেজ জড়িয়ে থাকে সকাল অবধি। এখন রাতের কালো আকাশ চিরে নিঃশব্দে নেমে আসে কুয়াশার চাদর। ভিজিয়ে দেয় গাছপালা, রাস্তার মানুষ, অলিগলি। ভোর-বেলাতে খিড়কি খুলেই কনকনে হিম ভেজা বাতাসের ধাক্কা চোখে মুখে। কুয়াশা মোড়ানো চরাচর যেন ঘষা কাচের ওপারের দৃশ্যাবলি। অস্বচ্ছ, অপার্থিব। অস্পষ্ট বৃক্ষরাজি, খাল-বিলের জল, পূর্ব আকাশে উঁকি দেয়া সূর্যটাও আড়াল। শীতের সকালগুলো সত্যি বড় বিচিত্র-মন ভোলানো। কৃষকরা সেই সকালবেলা শীত উপেক্ষা করে লাঙ্গল-গরু নিয়ে ছোটে মাঠের দিকে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গেলেই তারা হারিয়ে যায় কুয়াশার মধ্যে, গাছিরা খেজুর গাছ থেকে বেয়ে আনে রসের হাঁড়ি। গাছের নিচেই গাছের মালিকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে রস। তারপর ভাগের রস বাঁকে করে ছোটে বাড়ির পথে। সেই সকালেই রস জ্বাল দিয়ে তারা তৈরি করে খেঁজুরগুড় আর পাটালি।
পূর্ব আকাশে কুয়াশাঢাকা সূর্যের ম্লান মুখ। মরা রোদে উঠানে মাদুর বিছিয়ে ছেলেমেয়েরা কাঁচা রসে চুমুক দিয়ে কাঁপে থরথরিয়ে। তবু খেজুরের কাঁচা রস তাদের চাই-ই চাই। কারো কারো মা আবার সেই ভোরবেলা ওঠে ভাপা পিঠা তৈরি করে লেপ-কাঁথার নিচ থেকে ডেকে তোলেন তাদের ছেলেমেয়েদের। গরম পিঠার লোভে ছেলে-মেয়েরাও হৈ হৈ করে ওঠে পড়ে বিছানা থেকে। বাড়ির আঙিনায়, মাচার ওপর, খড়ের চালে শিশির ভেজা শিম, বরবটি, লাউ আর কুমড়ার গাছ-গুলো কী অপরূপ দেখায় শীতের সকালে। মাঠভরা সরিষার হলুদ ফুল মন কেড়ে নেয় প্রতিটি মানুষের। মটরশুঁটি আর সবুজ ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকে শিশির বিন্দু। তেতে ওঠা একটুখানি মিষ্টি রোদে তা যেন মুক্তা হয়ে জ্বলে। তারপর ঝরে পড়ে মাটির কোলে। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন… ‘শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে, মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার, চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ’। আমন ধানের সোঁদা গন্ধে ভরে ওঠে আবহমান বাংলার হেমন্ত সন্ধ্যা। সেই সন্ধ্যায়-রাতে টুপটাপ করে ঝরে পড়ে নিশির শিশির। নারিকেলের চিরল পাতার শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়ে শীতের ক্লান্তি। লেখক: শিশুসাহিত্যিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবনের মানে; যে প্রশ্নের উত্তর মিলে না কিছুতেই
পরবর্তী নিবন্ধদেশের আশাতীত অগ্রযাত্রা : এবার ভাবতে হবে জ্বালানি খাত নিয়ে