হামিদুর রহমান প্রধানত একজন চিত্রশিল্পী। তবে তিনি বিশেষভাবে খ্যাতিমান হয়েছেন বাঙালির জাতিসত্তা ও স্বাধীন রাষ্ট্রসত্তার সংগ্রাম আর প্রেরণার প্রতীক জাতীয় শহীদ মিনারের রূপকার হিসেবে। বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প চর্চার বিকাশেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।
হামিদুর রহমানের জন্ম ১৯২৮ সালে ঢাকার ইসলামপুরে। তদানীন্তন সরকারি আর্ট স্কুলে (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ – এই দু বছর প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ইউরোপে যান উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশে। প্যারিস, লন্ডন এবং ইতালির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চারুকলায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ রিসার্চ স্কলার হিসেবে যোগ দেন। কানাডার মন্ট্রিলে ফাইন আর্টস-এ শিক্ষকতা করেন বেশ কিছুকাল। হামিদুরের চিত্রকর্মে স্বদেশ, কাল আর সমকালীন সমাজ বাস্তবতা যেমন বিমূর্ত হয়ে ওঠে তেমনি পাক-হানাদার বাহিনির নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ জীবন্তরূপে উদ্ভাসিত হয়। শিল্পীর সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম ভাষা শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত জাতীয় শহীদ মিনার। মূলত এই মিনারটি এদেশের সকল সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। যুগ যুগ ধরে এই মিনারটি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এদেশের লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রতীক, আবহমান বাংলা ও বাঙালির মহান ঐতিহ্যের স্মারক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে শিল্পীর আঁকা ১৭০০ বর্গফুটের একটি দেয়াল চিত্রে আবহমান বাংলার রূপ ফুটে উঠেছে চমৎকার ব্যঞ্জনায়।
ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউট গ্যালারি, লন্ডন, ব্রাজিল এবং কানাডাতেও তাঁর আঁকা দেয়ালচিত্র বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদক পেয়েছেন। ১৯৮৮ সালের ১৯ নভেম্বর শিল্পী হামিদুর রহমান প্রয়াত হন।