শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শিক্ষা পাঠ্যক্রমকে সময় ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে যে বন্ধ্যাত্ব, তা সমাজকে স্থবির করে দেয়। নতুন কারিকুলামের প্রধান লক্ষ্য হলো, আমাদের সন্তানদের দক্ষ, জ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্ক মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। যাতে তৃণমূল স্তর থেকেই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে তার কেসিদে রোডের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান সরকারের অধীনে কোন পন্থা ও নীতি অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে? এই বিষয়ে তিনি কথাগুলো বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করলেও মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ১ কোটি ৮০ লক্ষ শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করতে পারে। ২ কোটির মধ্যে মাত্র ২০ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত পাঠ গ্রহণ করতে পারে। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রচলিত শিক্ষা ও পাঠগ্রহণ কার্যক্রমে বিশাল অংকের শিক্ষার্থী নিম্ন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠগ্রহণ করতে পারায় তারা দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত হতে পারছে না। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাঙালিদের অধিকাংশই অদক্ষ। তাই এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের গতি মন্থর।
তিনি বলেন, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে যে ২৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এগুলোর অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। এখন থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলে আমরা অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।
নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের অধীনে শান্তি, শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা সুরক্ষায় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে একটি মনিটরিং সেল গঠনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নীতি নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাজনীতি সৃষ্টিশীল, জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক দোকান পাঠ নয়, শিক্ষার্থীরা যাতে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে এবং নিজেরা নিজেদের সংস্থান করতে পারে সেদিকে শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হতে হবে।
তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, নিজেদের পেশার প্রতি দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। শিক্ষকরা অবশ্যই রাজনীতি করবেন, কিন্তু অন্ধভাবে রাজনৈতিক দলের তোষামোদকারী হয়ে নিজের হীন স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা না করাটাই বাঞ্ছনীয়। এতে শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে এবং শিক্ষাঙ্গনে শত ফুল বিকশিত হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেন, শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি বাণিজ্য ও অন্য কোনো অনৈতিকতা ও অনিয়মের সাথে কেউ যুক্ত হলে তাদেরকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই নির্দেশনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতি নির্ধারণ কাঠামো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার প্রায়োগিক স্তরগুলো হলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর এবং অনান্য প্রশাসনিক কাঠামো। এসব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাথে আনুপাতিক হারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় শিক্ষা খাতের অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি মাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও কোনো মেডিকেল কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তাই দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিক্ষার অগ্রসরমানতা অপেক্ষাকৃত মন্থর। এই প্রেক্ষিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাবলিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হলে শিক্ষার নতুন কারিকুলামে আমাদের ঢুকতে হবে। আমরা চাই এমন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, যা মন ও হৃদয়কে আলোকিত করে। আলোহীন শিক্ষা অন্তঃসারশূন্য। আমার বিশ্বাস মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে আজকের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সংকট ও ত্রুটিগুলো সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, অতীতে আমাদের লক্ষ্য ছিল শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি করা। আমরা ৭ শতাংশ থেকে শিক্ষিতের হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে পেরেছি। এই সফলতা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের। এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন করে তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা। এই লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন আনয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। এখন আমরা দক্ষ, প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর মানসম্পদ সৃষ্টিতে একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের অশান্তি সৃষ্টির কারণগুলো অরাজনৈতিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই অশান্তির কারণ ব্যক্তি স্বার্থ ও অনৈতিক কাজে অংশীদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জন্যই। আমরা যারা রাজনৈতিক নেতৃত্বে আছি, অবশ্যই শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি ও কলহ–বিবাদ দূর করে সমাধান দিতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে, চট্টগ্রামের একজন কৃতী সন্তানকে যোগ্য ও উপযুক্ত মানুষ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করেছেন। শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে তা মোকাবেলায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার মরহুম পিতা চট্টলবীর জননেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো সাহসী ভূমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি।
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উত্তর জেলার সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলার সহসভাপতি শাহাজাদা মহিউদ্দিন ও মোহাম্মদ নাছির, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, উত্তর জেলার সদস্য বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, মহিউদ্দিন আহমদ মঞ্জু প্রমুখ।