একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, শিক্ষার আলো হচ্ছে সূর্যের কিরণের মতো, যা আড়াল করা যায় না। ঘন কালো মেঘও কেটে যায়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একজন মহৎ প্রাণ শিক্ষক আপন আলোয় সমাজকে আলোকিত করে, দেশকে আলোকিত করে। গতকাল সকালে নগরীর কাজির দেউড়ির একটি কমিউনিটি হলে হুলাইন ছালেহ-নূর ডিগ্রি কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পুনর্মিলনী স্মারক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষাই একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের শিক্ষাটা শুরু হয় ছোটকালে মায়ের কোলে। মা-ই হচ্ছেন আমাদের প্রথম শিক্ষক।
আমাদের মায়েরা যদি শিক্ষিত হন, তাহলে প্রত্যেক ঘরে শিশুদেরকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারব। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেব।’ সুতরাং মায়েদের আমি সম্মান জানাই। কারণ আপনারাই জাতি গড়ার কারিগর। আগামী প্রজন্মকে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আজাদী সম্পাদক বলেন, আজকের শিশুরা শুধু স্কুল আর বাসার মধ্যে বন্দী। তাদের খেলাধুলার জন্য মাঠ নেই। লেখাপাড়ার সাথে সাথে যদি তারা খেলার মাঠে খেলতে পারত তাহলে মানসিক দিক দিয়ে তারা অনেক বেশি বিকশিত হতো।
তিনি বলেন, মানুষের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তার বিবেক। আপনারা দেখবেন, সিএনজির পেছনে লেখা থাকে ‘মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আদালত হলো তার বিবেক’। আমরা যদি বিবেকে তাড়িত হই, তাহলে মানবিক হয়ে উঠতে পারব। আমরা দুটি জিনিস দিয়ে তাড়িত হই, একটি মন আরেকটি হলো বিবেক। মনকে সরিয়ে আমরা যদি বিবেক দিয়ে তাড়িত হই, তাহলে সেই আদালতের কাজটিই করতে পারব। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হুলাইন ছালেহ-নূর কলেজ যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা সত্যিই মহৎ প্রাণ ব্যক্তি। এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দুঃসাহসিক কাজ। যারা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তাদের প্রচেষ্টা মহৎ ছিল বলেই এই প্রতিষ্ঠান আজকে সমাজে আলো ছড়াচ্ছে। আপনারা যারা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, আপনাদের অনেক দায়িত্ব আছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি। এই প্রতিষ্ঠানে যত গরিব-দরিদ্র ছাত্রছাত্রী আছে তাদের লেখাপড়ায় আপনাদের হাত বাড়িয়ে দেবেন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী আছে আমি আজাদীর পক্ষ থেকে প্রতি মাসে প্রত্যেককে তাদের পড়ালেখার জন্য বৃত্তি দিই। একই সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি ফ্যাকাল্টিতে আরো ১০টি স্কলারশিপ দিই। প্রত্যেক বিভাগে একটি করে এবং সাংবাদিকতা বিভাগে দুটি। এজন্য আমরা একটি থোক বরাদ্দ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। এখন ইন্টারেস্ট কমে গেছে। এজন্য আরো বরাদ্দ দেব, যাতে শিক্ষার্থীরা ভালো এমাউন্টে বৃত্তিটা পায়।
আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় আমরা চেষ্টা করি যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো দরিদ্র শিক্ষার্থী যদি আসে তাদের জন্য কিছু করার। নোবেল বিজয়ী মানবাধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, ‘আমাদের বই ও কলম দিন। এগুলোই আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি কলম এবং একটি বই পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। শিক্ষাই একমাত্র সমাধান।’ নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘শিক্ষা হচ্ছে এমন এক শক্তিশালী অস্ত্র যা দিয়ে তুমি পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পার।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে যুগ-যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি উল্লেখ করে এম এ মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে একটি লাল-সবুজের পতাকা দিয়ে গেছেন। এই পতাকা এবং স্বাধীনতাকে ধরে রাখাটাই হলো আমাদের প্রথম কাজ।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হুলাইন ছালেহ-নূর কলেজ প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও পুরো এলাকাকে আলোকিত করেছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য গুণী ছাত্রছাত্রী বের হয়ে আজকে সারা দেশে নানা পেশায় আলো ছড়াচ্ছে।
কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সমিতির আহ্বায়ক সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক পুনর্মিলনী স্মারক গ্রন্থ প্রকাশনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক নাট্যজন সনজীব বড়ুয়ার সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সমিতির সদস্য সচিব অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী।












