শিক্ষার সাথে সংস্কৃতির গভীর সংযোগ সাধন জরুরি

গৌরী প্রভা দাশ | রবিবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সময়টা এমন যখন করোনার আঘাতে সবাই জর্জরিত, মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়াটা সময়সাপেক্ষ। ঠিক এর মধ্যেই ঘটে যাচ্ছে কত পাশবিক ঘটনা। সমাজের মানুষরূপী কিছু কীট মেয়েদের শুধু ভোগের পণ্য হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। আর সেই সব বিকৃত মানুষের পরিবার তাদের হয়তো এই শিক্ষায় দিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ অভিভাবক একজন শিশুকে বড় ও তৈরী করেন মেয়েমানুষ আর পুরুষ হিসেবে। মেয়ের জন্য পেতে রাখেন হাজার বাধা নিষেধের বেড়ি! এটা করতে মানা, ওটা করতে মানা! তাকে হতে হবে নমনীয়, কমনীয়, পর্দানশীন, সংযমী। আর ছেলে তোমার জন্য অবারিত স্বাধীনতা। উড়ে বেড়াও তোমার লাগামহীন প্রান্তরে। তার সাথে যোগ হয় অভিভাবকদের দেয়া প্রশ্রয়।এসব অভিভাবকের অর্থের পেছনে ছুটে চলা, বৈধ, অবৈধ সব পথেই অর্থ উপার্জন করে ধন সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলাটাই একমাত্র লক্ষ্য। কারণ তারা জানে এ সমাজে এখন টাকার মানদণ্ডে সম্মান পাওয়া যায়। এদের শিক্ষার সাথে সুস্থ সংস্কৃতির কোন সংযোগ থাকে না। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে শুভ আর অশুভ দুটি সত্তার বসবাস। অশুভ সত্তা যখন শুভ সত্তাকে পাশ কাটিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে তখনই মানুষের কুপ্রবৃত্তিগুলো চাড়া দিয়ে ওঠে। আর এর জন্য প্রয়োজন সুস্থ ও সংস্কৃতিমনা পরিবার। একটি সন্তান যখন সুস্থ সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠে, নানা সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখে তার পক্ষে কখনোই খারাপ কোন কর্মকাণ্ডে জড়ানো সম্ভব হয় না কারণ তার বিবেক তাকে বাধা দেয়। এভাবে পিতা মাতারা যদি সন্তানকে সাংস্কৃতিক আবহে গড়ে তুলতে পারেন তবে তার অন্তরাত্মা শুদ্ধ হবে। মানসিকতা উদার হবে। যে সন্তান সৃজনশীল কাজ করে, গান করে, খেলাধুলা করে, সাহিত্যকর্ম করে, তার পক্ষে ধর্ষণ করা অসম্ভব কারণ তার বিবেক জাগ্রত। সে বুঝবে কখন তার কোন কাজটি করা উচিত আর অনূচিত। বর্তমানে আমাদের তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থায় মেধা ও মননের বিকাশ ঘটে এমন কোন সংস্কৃতিচর্চা নেই, নতুন প্রজন্মকে আনন্দময় পরিবেশে বেড়ে উঠার প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। তাই তারা প্রযুক্তির অপব্যবহারের সুযোগ নিয়ে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে এবং অশুভ কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। তাই সন্তানকে তথাকথিত শিক্ষায় শিক্ষিত করে শিক্ষিত জাতি গড়ে তুললে ধর্ষণ ও অপকর্ম রোধ করা যাবে না। শিক্ষার সঙ্গে থাকতে হবে সংস্কৃতির যোগ। সংস্কৃতির অবিরাম চর্চার পাশাপাশি চালাতে হবে ধর্ষণবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা। নারী একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ, তার প্রতি কোনোরকম অবিচার ও বৈষম্যমূলক আচরণ করা অন্যায়–প্রজন্মের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে এই বোধ। জাগিয়ে তুলতে হবে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকটি মৃত্যু, আমাদের বাবা মা, সমাজ ও মিডিয়া
পরবর্তী নিবন্ধকরোনাকালীন চাকরিহারা অসহায় মানুষের নীরব আর্তনাদ