শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মনোযোগ দিতে হবে

| বুধবার , ১১ মে, ২০২২ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার সঙ্গে অগ্রগতির সম্পর্ক নিবিড়। শিক্ষা ও উন্নয়ন পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হওয়ার ফলে একটি ব্যতীত আরেকটির উন্নয়ন আজকের পৃথিবীতে কল্পনাতীত। যে দেশ যত বেশি শিক্ষিত, সে দেশ তত বেশি উন্নত। বেঞ্জামিন ডিজরেলি বলেছেন, ‘দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার ওপর সে দেশের নিয়তি নির্ভরশীল।’ এরিস্টটলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য কী? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, মৃত ও জীবিতের মধ্যকার পার্থক্য যেমন। শিক্ষা সাধারণভাবে শিখন ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ার সমন্বয়কে বোঝায়। সার্বিকভাবে শিক্ষা হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও বিচারশক্তি এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। ব্যক্তি একজন পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হয় শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে।

শিক্ষা গবেষকদের মতে, শিক্ষা ব্যক্তির শক্তিকে সম্পদে পরিণত করে, নানা কর্মে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সামর্থ্য জোগায়। শিক্ষার সঙ্গে অর্থনীতিরও সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনীতি যেমন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তেমনি শিক্ষা অর্থনীতিশাস্ত্র একটি দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক অবস্থান ও সম্পদের প্রতুলতা বিবেচনা করে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। সমাজ, দেশ ও বৈশ্বিক কাঠামো বিশ্লেষণ করে গবেষকরা প্রমাণ করেছেন শিক্ষার সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামগ্রিক উন্নয়নের যেমন সম্পর্ক আছে, তেমনি অর্থনীতির তথ্য সমূহের প্রয়োগ শিক্ষাক্ষেত্রে সম্ভব। খালেদা আক্তার তাঁর একটি লেখায় বলেছেন, শিক্ষার মধ্য দিয়েই একটি দেশ যেমন অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে, প্রযুক্তিগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে উৎপাদনের উপায়সমূহের মালিকানা নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রসার ঘটাচ্ছে। শিক্ষার এই বহুমাত্রিক অবদান উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট হওয়ায় অর্থনীতি শাস্ত্রের সঙ্গে যোগাযোগ সুদৃঢ়করণ ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকল অর্থেই শিক্ষা কোনো দেশ বা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। শিক্ষার মাধ্যমে মানব পুঁজির উন্নয়ন সাধন ব্যতীত কোনো দেশই স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হতে পারে না। শিক্ষা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ব্যক্তির আয় বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করে। শিক্ষা যেমন ব্যক্তির আয় বৃদ্ধি করে, সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধি করে, প্রযুক্তিগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে, তেমনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে সমাজের দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখে। শিক্ষা সামাজিক বিষয়ে ব্যক্তির সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থা সম্পর্কে প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড-প্রত্যেক স্তরে অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। শিক্ষাই যেখানে উন্নতির চাবিকাঠি, সেখানে যদি অনিয়ম প্রত্যক্ষ করে লোকজন, তা হবে নিতান্তই দুঃখজনক।

তাই আমাদের দেশ ও জাতির সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য সাধারণ শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি ও বৃত্তিমুখী শিক্ষায় গুণগত উৎকর্ষের বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। শিক্ষার গুণগত মানের অবনতি ঠেকানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষকে এগিয়ে যেতে হয় জ্ঞান, দক্ষতা ও শিক্ষার চর্চার মাধ্যমে। সমস্ত উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নতির প্রধান ভূমিকায় থাকে বুদ্ধিদীপ্ত ও যোগ্য জনশক্তি। আমাদের দক্ষ ও উন্নতমানের উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য দরকার আরও অনেক বেশি উন্নত মান ও স্তরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী। বলা বাহুল্য যে, সকল সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো মানব মূলধন। তাই ব্যক্তি ও জাতীয় স্তরে সমৃদ্ধির প্রধানতম অবলম্বন হলো শিক্ষা। শিক্ষাকে তাই বিনিয়োগ ও অনেকটা উৎপাদন স্থাপনার মতো করেই দেখতে হবে। শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে