শিক্ষার্থীদের হাফ ফাঁসের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন

প্রদীপ ভট্টাচার্য্য | শনিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চলতি মাসে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ডিজেল চালিত বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে ভাড়াও পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়া যথাযথ কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখা যেমন সরকারের দায়িত্ব ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের বিষয়ে সরকারের সঠিক নির্দেশনা থাকা উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় যখন রাজধানীতে সরকারী মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী হাফ ভাড়া নিতে বলায় ঐ ছাত্রীকে বাসের ড্রাইভার ও হেল্পার যখন ধর্ষণের হুমকি দেয় তাঁর চাইতে লজ্জা আর কি হতে পারে? এটি স্বাধীন বাংলাদেশে কোনদিন কাম্য নয়। অথচ হাফ পাসে ভাড়ার বিষয়টি অনেক পূর্ব থেকে নির্ধারিত। তাছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে “১১ দফা” নামে শিক্ষার্থীদের যে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচীতে দেখা যায়, সেখানেও হাফ ভাড়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। ১১ দফা ১-এর (ঢ) অনুচ্ছেদে আমরা দেখতে পাই, শুধু বাসে নয় ট্রেন, স্ট্রিমার ও লঞ্চে ছাত্র-ছাত্রীদের আইডেন্টিটি কার্ড দেখিয়ে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কন্সেশনে টিকেট দেয়ার ব্যাবস্থা করিতে হইবে তা উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নয় দিনের লাগাতার আন্দোলনের পর নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন হয়। এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফার একটি ছিল হাফ ভাড়া নেয়ার দাবি। কিন্তু তারপরেও দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস বিষয়ে প্রতিনিয়ত বাসে উঠে অর্ধেক ভাড়া দেয়াকে নিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ ও গণমাধ্যমে দেখতে পাই স্কুল কলেজে শিক্ষার্থী দেখলেই বাসে তুলতে না চাওয়া, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া, আধা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ছাত্রদের হয়রানি করা। এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক ও হট্টগোল লেগেই আছে। তাই গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্যের এই সংঘবদ্ধ চক্রকে প্রতিহত করতে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল কলেজের ক্লাস ও লেখাপড়া বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। অথচ পূর্বে আমরা দেখেছি বাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় পত্র দেখালেই কন্ট্রাক্টররা কোন কথা ছাড়াই হাফ ভাড়া নিত। বহু বছর ধরে শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছিল। এটা ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার। কিন্তু বর্তমান সময়ে গণ পরিবহন খাতে নানা নৈরাজ্যের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের হাফ পাসের ভাড়া নিয়েও চলছে এক ধরনের নৈরাজ্য। যার ফলে এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যে দেশজুড়ে যেভাবে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও বিভিন্ন সভা সমাবেশ থেকে আল্টিমেটাম দিচ্ছে। তা থেকে বোঝা যায় অচিরেই একরকম বিস্ফোরক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে যা কখনোই কাম্য নয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হাফ-ফাঁস বিষয়ে চলমান আন্দোলনের সাথে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো একাত্মতা প্রকাশ করলে বর্তমান পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হতে পারে। তাই অবিলম্বে সরকার ও পরিবহন মালিকদের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমলে নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিটি মেনে নিয়ে আইনে হোক ঘোষণায় হোক তা বাস্তবায়ন করা। কেননা এরাই হচ্ছে আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্ণধার।
লেখক : ছড়াকার ও শিশুসংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘হাফ-ফাঁস শিক্ষার্থীদের আবদার নয় অধিকার
পরবর্তী নিবন্ধপ্রশ্নপত্র ফাঁস