‘হাফ-ফাঁস শিক্ষার্থীদের আবদার নয় অধিকার

| শনিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ-ফাঁস’ বা অর্ধেক ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।চলতি মাসে (নভেম্বর) তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। বর্ধিত ভাড়ার মধ্যে কিছুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চালুর দাবি জানাচ্ছে। তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। গত রোববারও (২১ নভেম্বর) বিক্ষোভ-অবরোধ ছিল। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে হাফ বা অর্ধেক ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে ঢাকার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে একটি বাসের চালকের সহকারী (হেলপার) ও চালককে রোববার আটক করেছে র‌্যাব। এর আগেও অভিযুক্ত হেলপার-চালকের গ্রেফতার ও ‘হাফ ফাঁস’ নির্ধারণের দাবিতে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। অভিযুক্ত আটক হলেও তাদের মূল দাবি এখনো পূরণ হয়নি। হাফ পাসের দাবির বিষয়টি নতুন কোনো বিষয় নয়, এটি পুরনো বচসা নতুন রূপে ফিরে এসেছে। ইতিহাস বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভেরও আগে, পাকিস্তান আমলে এ দেশে শিক্ষার্থীরা যানবাহনে হাফ ভাড়া দেওয়ার অধিকার পেয়ে এসেছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে গণ-পরিবহন; বিশেষত ঢাকা শহরের কোনো কোনো পরিবহন কোম্পানির তথাকথিত সিটিং সার্ভিসগুলোতে হাফ ভাড়া না রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হাত ধরে আসা ১১ দফা দাবির একটি ছিল ‘হাফ ভাড়া’ নির্ধারণ। পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ঘোষিত এই ১১ দফা দাবির একটি ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া রাখা। এ নিয়ে নানা সময়ে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এছাড়াও আমি মনে করি। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এ ধরনের পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারকে নীতিমালা তৈরিসহ আইন প্রণয়ন করতে হবে। শুধু আইন তৈরি নয়, তা বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারিও প্রয়োজন। ‘হাফ-ফাঁস’ নির্ধারণ দেশের সকল শিক্ষার্থীরই চাওয়া বলে আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি। পরিশেষে এটাই বলবো সরকার যেন দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে ‘হাফ-ফাঁস’ কার্যকর করে। তা না হলে ক্ষোভের এই ছাইচাপা আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমনটা ছড়িয়ে পড়েছিল ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়।
জেসমিন আক্তার
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বি.বি.এ (সম্মান) তৃতীয় বর্ষ, জয়নাল হাজারী কলেজ ফেনী

পূর্ববর্তী নিবন্ধশহীদ ডা. মিলন : প্রতিবাদী চেতনার আরেক নাম
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থীদের হাফ ফাঁসের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন