শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ক্লাসে উপস্থিত রাখার সুপারিশ কাজে লাগাতে হবে

| শনিবার , ৩০ মার্চ, ২০২৪ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক জরিপে উঠে এসেছে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক না হওয়ায় কিশোর অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি না থাকার কারণে শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনীহা সৃষ্টিসহ ৯ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার চিত্র তুলে আনা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি বাধ্যতামূলক উপস্থিতি নিশ্চিত করার গুরুত্ব এবং পাশের দেশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

গত ২৫ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিশোর অপরাধ থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৭০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য অভিভাবকদের কাছে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পদ্ধতি চালুসহ পাঁচটি সুপারিশও করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত জরিপে পুলিশ দেখেছে, ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, সামপ্রতিক সময়ে দেখা গেছে, কিশোররা বিভিন্ন ধরনের অপরাধের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। কেন শিক্ষার্থীরা অপরাধের দিকে ঝুঁকছে তার কারণ খুঁজতে গিয়ে মূলত এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। যাদের পড়ালেখা করার কথা, তারা অপরাধে জড়ানোর মতো সময়টা কোথায় পাচ্ছে সেটা খুঁজতে গিয়ে পেলাম, অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন না। শ্রেণিকক্ষে বাধ্যতামূলক উপস্থিতির বিষয়টি না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালীন বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রে এসএসসি পরীক্ষার জন্য নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ন্যূনতম ৭০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকলে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছিল এই নিয়মে। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট আদেশটি বাতিল করা হয়। শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাধ্যবাধকতা না থাকার প্রভাব হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্লাসে উপস্থিত না থেকে শিক্ষার্থীরা কথিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে কেউ যখন অন্য সহপাঠীর ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য শিক্ষার্থীও গ্যাং সদস্য হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কথিত বড় ভাইদের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে কিশোর বয়সের হিরোইজম দেখানোর জন্য এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফি ও যৌন কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর অপরাধ একটি জাতির উন্নতির পথে একটি বিরাট বাধা। এটি থেকে দেশের কিশোরদের মুক্ত করতে সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারকে। এখান থেকেই শিশুর সঠিক সামাজিকীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবারের কিশোরদের ছোট বয়স থেকেই ভালোমন্দ, ন্যায়অন্যায় থেকে শুরু করে অপরাধ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। সব সময় পর্যবেক্ষণ করা দরকার তাদের আচরণ, অভ্যাস ব্যবহার, কথাবার্তা ইত্যাদি। বন্ধুবান্ধব কারা সে বিষয়েও খেয়াল রাখা দরকার। ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্মগ্রন্থ পাঠ, ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানগুলো পালনে উৎসাহিত করার মাধ্যমেও পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে। সন্তানরা যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার করে পরিবারকে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।

নগর পুলিশের পক্ষ থেকে যে জরিপ চালানো হয়েছে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি কিশোররা ব্যস্ত থাকে, তাহলে তাদের কিশোর অপরাধে জড়িত হওয়ার আশংকা কম থাকে। ক্লাসে তাদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতি এজন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে এখন আতঙ্কের নাম কিশোর অপরাধ। শহরে বা গ্রামে কিশোররা শিক্ষক, বয়স্ক কাউকেই তোয়াক্কা করে না। তামাকদ্রব্যের সহজপ্রাপ্যতা কিশোরদের অপরাধ জগতে শুরুটা করে দিচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতি, পদ পদবির জন্য কিশোররা রাজনৈতিক নেতাদের অনুসারী হয়ে থাকে। এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বে কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। যেটা উদ্বেগজনক।

আমরা মনে করি কিশোর অপরাধ নীতিমালা আরও কঠোর করা প্রয়োজন। যেখানে একজন কিশোর খুনের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে, সেখানে তাকে নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে সংশোধন করার চিন্তা হবে পণ্ডশ্রম মাত্র। ফলে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ক্লাসে উপস্থিত রাখতে পুলিশের এ প্রতিবেদনে যে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়, তার বাস্তবায়নও দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে