শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সব ধরনের সংকট দূর করার পদক্ষেপ নিন

| বৃহস্পতিবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। এ নিয়োগে শূন্য পদ যাচাই-বাছাই শেষে বিজ্ঞপ্তির অনুমোদিত পদের সঙ্গে পাঁচ হাজারের মতো পদ বাড়ানো হবে।

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির অনুমোদিত পদ অনুসারে ৩২ হাজার ৫৭৭ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল, ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নেওয়া হবে। অবসরের কারণে ১০ হাজারের বেশি পদ খালি হওয়ায় পদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক সংকট প্রকট এখন। এই সংকটের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষা কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য পদের চাহিদাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর ওই তথ্য যাচাইয়ে ৩ মাস পার করে ফেলেছে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ। দ্রুত শূন্য পদগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে, যা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ায় চাকরি প্রার্থীদের হতাশা বাড়ছে। যত দ্রুত সম্ভব শূন্য পদগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে আরো জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে পড়াশোনার ধরন বদলে ফেলা হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থী মূল্যায়নে বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে; তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জনে গুরুত্ব বাড়ানো হবে যাতে জীবনমুখী শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য ও মেধাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের মতো করে শেখানোর চেষ্টা করা হবে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে-এ বিষয়ে আমরা দৃঢ় আশাবাদী। এক্ষেত্রে আমাদের সংশয় শিক্ষকদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই শিক্ষাক্রম আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণীতে পুরোপুরি চালু হবে। প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে শিক্ষকের প্রয়োজন। নিয়োগ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু না হলে এসব উদ্যোগ কোন কাজে আসবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থাপনা এমন হওয়া উচিত নয় যে, বিদ্যালয়গুলো শূন্যতার মধ্যে পড়বে। উন্নত বিশ্বে এমন শিক্ষক সংকট হয় বলে আমাদের জানা নেই। শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এমন শূন্যতা তৈরি হয়, শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণ ব্যাহত হয়।

বিশ্লেষকদের অভিমত, ‘নানা কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতাও দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গ এলেই অনেকে বলে থাকেন, দেশে হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশীর বিপরীতে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, চাকরিপ্রত্যাশী প্রত্যেকেরই যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হওয়া উচিত। তবে অযোগ্য কেউ যাতে কোনো পর্যায়েই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ না পান, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে’।

দেশে শিক্ষার অগ্রগতির পাশাপাশি এর মান যে বাড়ছে না, তা শিক্ষাবিদরা বারবার বলছেন। তাই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক সংকট দূর করার সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের সংকট দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে