শিক্ষক হত্যা ও অবমাননার বিচার নিশ্চিত করতে হবে

| শুক্রবার , ১ জুলাই, ২০২২ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং নড়াইলে কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে চলেছে। রাজধানী ঢাকা-বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহর এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠছেন। এই দুই ঘটনা যেমন দুঃখজনক, তেমনি উদ্বেগজনক। এই উগ্র সামপ্রদায়িক ঘটনা প্রমাণ করে, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই রাষ্ট্রের নীতি ও নৈতিকতা আজ কতটা বিপন্নতার মুখোমুখি! এই সকল ঘটনা আরো প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশকে কোনো মহল পরিকল্পিতভাবে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করছে।

খবরে জানা যায়, সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুলছাত্র আশরাফুল আহসান জিতুকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গত বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না, তার যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যা ও অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ ঘটনার জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সমিতির সভাপতি ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব বলা হয়। শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলো মারাত্মক। এসব ঘটনা সমগ্র জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মুক্তবুদ্ধির চর্চার জন্য শিক্ষকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেওয়া ও দায়িত্বে অবহেলায় এ অপরাধগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। উন্নত আয়ের সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে আত্মবিকাশের জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া এবং শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

এদিকে, উক্ত দুই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটি এই দুই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। পাশাপাশি শিক্ষক সুরক্ষার ব্যাপারে নতুন করে ভাবারও আহ্বান জানিয়েছে এই শিক্ষক সংগঠনটি। বিবৃতিতে বলা হয়, দুটি ঘটনাতেই সামাজিক অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার হীন উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। এ ছাড়া সামাজিক, পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে কোথাও কোথাও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি দেখা যাচ্ছে।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সব স্তরের শিক্ষার্থীর নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার বিকল্প নেই। নতুন প্রজন্মকে ধর্মান্ধতা থেকে বের করে পরমতসহিষ্ণুতা, অসামপ্রদায়িকতা ও মুক্তচিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাতে তারা আদর্শ জীবন গঠনসহ দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। এসব ঘটনার তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষক সুরক্ষার ব্যাপারে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

আসলে সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের এতটাই অবক্ষয় হয়েছে যে, এমন নৃশংস ও লজ্জাজনক খবর আমাদের হজম করতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষককে চরম অপমানের ঘটনা দেশে এটাই প্রথম নয়, এর আগে আরও বেশকিছু লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হওয়ার কারণে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিটি ঘটনার সঙ্গেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে।
শিক্ষকরা জাতির সম্পদ। সারা জীবন তাঁদেরকে সম্মান জানানোর পরও তাঁদের ঋণ শোধ করা যায় না। অথচ এই শ্রদ্ধাস্পদ শিক্ষকদের পদে পদে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। এটা এখন সমাজের ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাধি সারতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে