চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় গতকাল শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে তিন উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম।
মীরসরাই উপজেলায় অধিকাংশ কেন্দ্রেই খুব স্বল্প সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি ছিল। এর মধ্যেও কিছু কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত জালভোট দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তবে সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান লক্ষ করা গেছে। চট্টগ্রামের ৩ উপজেলার ২৯০টি কেন্দ্রের ২১৬৫টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণে নিয়োজিত ছিলেন ৬৭৮৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে প্রতিটি উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সন্দ্বীপে বিজিবির পাশাপাশি ছিল কোস্টগার্ডও। সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই এই তিন উপজেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স ছিল পুলিশের। পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন ছিল।
মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার কারণে সকাল ১০টা নাগাদ অধিকাংশ কেন্দ্রই ফাঁকা ছিল। এরপর আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে এলে কেন্দ্রগুলোতে দু–চার জন করে ভোটারই আসতে দেখা গেছে। অনেক কেন্দ্রেই দুপুর ১২টা নাগাদ ৫ শতাংশ ভোটও সংগ্রহ হয়নি।
জোরারগঞ্জ টেক্সটাইল কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার নুরুল আজিম বলেন, ৪২৩২ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২৬০জন। হিঙ্গুলী মানবিবি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুকতাদির রহমান জানান, ৪৫৪৫ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর ১টা নাগাদ ৪৫০জন ভোট দিয়েছেন। বিকাল ৪টা নাগাদ দুর্গাপুরের রঘুনাথপুর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ফজলুল হক জানান, তার কেন্দ্রে ২৫৪১ জন ভোটারের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৬৫০ ভোট। সরকারহাট এনআর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কয়েকটি বুথে সকাল ১০টা নাগাদ একটি ভোটও পড়েনি। পোলমোগরা কেন্দ্রে ও একই দৃশ্য দেখে গেছে।
জানা গেছে ১২নং খৈয়াছরা ইউনিয়নের উত্তর আমবাড়িয়া কেন্দ্রে সহকারি প্রিসাইডিং ও পোলিংসহ ৩ কর্মকর্তাকে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট জাল ভোটে সহায়তা কালে আটক করে। তবে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি জেনেছি তবে চূড়ান্তভাবে এখনো কিছু বলতে পারছি না। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি লিটন কুমার চৌধুরী জানান, কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতিও বাড়তে শুরু করে। কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি দেখা গেলেও সার্বিক অবস্থায় দেখা গেছে ভোট দেয়ার জন্য মানুষের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ বা আগ্রহ ছিল না।
মহিলা ভোটারের সংখ্যা ছিল একেবারে কম। নির্বাচনে প্রতিটা কেন্দ্রে নিরাপত্তায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। তবে নিরাপাত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। ভোট গ্রহণকালে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল আলম রাজু, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মহিউদ্দিন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীনুর আক্তার বিউটির এজেন্ট থাকলেও দলীয় অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট পরিলক্ষিত হয়নি। দুপুর ১২টার দিকে সলিমপুর ইনামনগর ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে সীতাকুণ্ড আসনে সংসদ সদস্য এস এম আল মামুন ভোট প্রদান করেন।
এ সময় তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডে শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু থাকায় শ্রমিক–কর্মচারীরা ভোট দিতে না পারায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান। এদিকে বিকাল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল আহমেদ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা বিজয় সরণি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
আমাদের সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানান, সন্দ্বীপ উপজেলায়ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার কিছু কিছু কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি দেখা গেলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোট উপস্থিতি কম। মগধরা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের পাবলিক হাই স্কুল কেন্দ্রে সকাল ১০ টা পর্যন্ত কয়েকটি বুথে পুরুষ মহিলা ভোটারদের কিছুটা দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এছাড়া মগধরা ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেলেও অন্যান্য ইউনিয়নের কেন্দ্রেগুলোর চিত্র ছিল অনেকটা ভোটার শূন্য। উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সব বুথে আনারস প্রতীকের এজেন্ট থাকলেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাপ পিরিচ প্রতীকের অনেক বুথে এজেন্ট ছিল না।