ঝড়ো হাওয়ায় ডুবলো একে একে লবণ বোঝাই ২০ ট্রলার

৫০ মাঝিমাল্লা উদ্ধার, নিখোঁজ আরও ২০ ১ কোটি ৫ লাখ টাকার লবণ জলে

আনোয়ারা ও বাঁশখালী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৯ মে, ২০২৪ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ২০টির বেশি লবণবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে বঙ্গোপসাগরের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপকূলের সাঙ্গু নদের মোহনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জনকে উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ থাকে আরও অন্তত ২০ মাঝিমাল্লা ও শ্রমিক। তারা বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা জানায়, একে একে ২০টি ট্রলার ডুবির ঘটনায় অন্তত ৩০ হাজার মণ লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিমণ ৩৫০ টাকা হারে এ লবণের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও বাঁশখালী থেকে লবণবোঝাই ২০টির অধিক লবণ বোঝাই ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ ৩০ মাঝিমাল্লা ও শ্রমিককে উদ্ধার করে। পরে সাঁতার কেটে ও স্থানীয়দের সহায়তায় আরো ২০ মাঝিমল্লা উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় এখনো ২০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। উদ্ধারকৃতরা হলেন, কুতুবদিয়া উপজেলার তৌফিক এলাহী ট্রলারের মাঝি মো. মানিক, নুরুল আমিন, মো. আনিস, বার আউলিয়া ট্রলারের মাঝি মো. ফারুক, বদি আলম, আবু হানিফ ও আবু তৈয়ব, বাঁশখালী উপজেলার আল্লাহর দান ট্রলারের মাঝি মো. জিয়া, মো. আলী, মো. মানিক, মো. সোহেল, মো. মনচুর, জাবেদ আহমদ প্রমুখ।

উদ্ধার হওয়া বার আউলিয়া ট্রলারের মাঝি ফারুক জানান, কুতুবদিয়া থেকে লবণ বোঝাই করে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের সাঙ্গু নদীর মোহনায় হঠাৎ ঝড় তুফানে আক্রান্ত হয়ে বোটসহ আমরা ডুবে যাই। খবর পেয়ে নৌপুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। তিনি জানান, এই সময় তাদের সাথে থাকা ১৫ থেকে ২০টির মতো ট্রলার ডুবে গেছে। প্রতিটি ট্রলারে ৫ থেকে ৭ জন মাঝিমাল্লা ছিল।

নিখোঁজ বার আউলিয়া ট্রলারের মালিক কুতুবদিয়া এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, আমার মালিকানাধীন ‘এমভি বার আউলিয়া’ নামের ট্রলারটিতে ৬০ টন লবণ ছিল। এতে আমার ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার ট্রলারের সব মাঝি মাল্লাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

আনোয়ারা বারআউলিয়া নৌপুলিশের সহকারী ইনচার্জ মোহাম্মদ ফারুক জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ট্রলার ডুবির খবর পেয়ে দুইটি ট্রলার নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ১২ জনকে উদ্ধার করি। এরপর সাঙ্গু কোস্টগার্ড দুইজনকে এবং পতেঙ্গা কোস্টগার্ড আরও চারজনকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃতদের আমরা চিকিৎসা ও দুপুরের খাবার দিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।

তিনি জানান, আমরা জানতে পারি ট্রলার ডুবির পর ১৫ থেকে ২০ জনকে সাঁতার কেটে উপকূলে আসার পথে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। তাদেরকেও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয়রা। বর্তমানে ঘাটকল এলাকায় ডুবে যাওয়া চারটি ট্রলার রয়েছে। সেগুলো স্থানীয়দের জিম্মায় আছে।

বারআউলিয়া নৌপুলিশ জানায়, উদ্ধার করা ব্যক্তিদের মাধ্যমে জানতে পারি ট্রলারগুলো লবণ বোঝাই করে কুতুবদিয়া মহেশখালী বাঁশখালী থেকে একযোগে চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিল। এ সময় কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়লে বঙ্গোপসাগরে মোহনায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কতজন নিখোঁজ রয়েছে তারও কোনো সঠিক তথ্য নেই নৌ পুলিশের কাছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে নৌ পুলিশের পাশাপাশি অভিযান চালাচ্ছে কোস্ট গার্ডও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউঠে গেল সীমা, সুদহার ঠিক করবে ব্যাংক
পরবর্তী নিবন্ধশান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম