শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বি : বরেণ্য দেশব্রতী

| মঙ্গলবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বর্বর পাকিস্তাানি ও তাঁদের এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতার এক নির্মম ইতিহাস বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। বিজয়ের একদিন আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনি এদেশীয় রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনির সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা করে ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীসময়ে চোখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন বধ্যভূমিতে। ডা. ফজলে রাব্বি তাঁদেরই একজন। আজ তাঁর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ফজলে রাব্বির জন্ম ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নম্র, বিনয়ী রাব্বি চিকিৎসক হিসেবে যেমন খ্যাতিমান ছিলেন তেমনি ছিলেন প্রগতিমনস্ক, সংস্কৃতিবান এবং রাজনীতি সচেতন একজন দেশব্রতী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। মেধাতালিকায় শীর্ষস্থান অধিকারের জন্য তাঁকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা গবেষণামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ডা. রাব্বি আন্দোলনরত জনতার সাথে রাজপথে নেমে এসেছিলেন তাঁর কয়েকজন সহকর্মী সহ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে সব ধরনের প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডে তাঁর ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র ও সহকর্মী শিক্ষকদের মধ্যে তিনি তাঁর আদর্শ ছড়িয়ে দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ, আহতদের ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিতেন গোপনে। তিনি বুঝতেন, তাঁর ওপর পাকিস্তানি ও রাজাকার-আলবদরদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। কিন্তু তারপরও বিপদের আশঙ্কাকে তুচ্ছ করে অসীম সাহসে তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে গেছেন। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল সময়। ১৫ ডিসেম্বর, বিজয়ের ঠিক আগের দিন বিকেলে আলবদর বাহিনির কয়েকজন সদস্য ডা. রাব্বির বাড়ি ঘেরাও করে বন্দুকের মুখে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। আরো অনেক বুদ্ধিজীবীর মতোই তিনিও আর ফিরে আসেন নি। পরে ডা. রাব্বি আর ডা. আলীম চৌধুরীর মৃতদেহ ঢাকার এক বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার করা হয়।
সম্ভবত ১৫ ডিসেম্বরই আলবদর বাহিনির ঐ দলটি ডা. আলীমকেও অপহরণ করে এবং সেই রাতেই দুজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ডা. ফজলে রাব্বীর নামানুসারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে। তাঁর নামে রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি স্মারক ডাকটিকেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা