শহীদ কাদরী : স্বকীয়তায় এক অনন্য কবি

| রবিবার , ২৮ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

শহীদ কাদরী। আমেরিকান প্রবাসী বাংলাদেশী কবি ও লেখক। তাঁর কবিতা আমাদের নিয়ে যায় সম্পূর্ণ এক আলাদা জগতে, ঝলমলে বিশ্ব-নাগরিকতাবোধ ও গভীর স্বাদেশিকতায়। শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট ভারতের কোলকাতা শহরের পার্ক সার্কাসে জন্ম নেন এবং কোলকাতা শহরে তার শৈশব কাটান। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের দিকে দশ বছর বয়সে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। এরপর প্রায় তিন দশক তিনি ঢাকা শহরে অবস্থান করেন এবং ১৯৭৮ সাল থেকে প্রবাসজীবন শুরু করেন। তিনি বার্লিন, লন্ডন, বোস্টন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন। এগারো বছর বয়সে ১৯৫৩ সালে তিনি ‘পরিক্রমা’ শিরোনোম তার প্রথম কবিতা রচনা করেন যা মহিউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘স্পন্দন’ কাগজে ছাপা হয়েছিল। এরপর ‘জলকন্যার জন্য’ শিরোনামে কবিতা লিখেন, এবং একই কাগজে ছাপতে দেন। এভাবে নিয়মিত অনিয়মিতভাবে তার কবিতা লেখা চলতে থাকে। শহীদ কাদরী লিখেছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু লিখেছেন খুবই অল্প। তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা চার। এই চারটি গ্রন্থে কবিতা রয়েছে ১৫০টির মতো। আবার গ্রন্থ চারটির প্রকাশকাল দেখেও বিস্মিত হবার মতো। প্রথমটি অর্থাৎ ‘উত্তরাধিকার’ প্রকাশিত হয় কবির ২৫ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। এরপর ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ নামক গ্রন্থ। এর প্রায় ৩০ বছর পরে ২০০৯ সালে প্রকাশিত হলো ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ গ্রন্থটি। তিনি ১৯৪৭-পরবর্তীকালের বাঙালি কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিনি নাগরিক-জীবন-সম্পর্কিত শব্দ চয়নের মাধ্যমে বাংলা কবিতায় নাগরিকতা ও আধুনিকতাবোধের সূচনা করেছিলেন। তিনি আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক অভিব্যক্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন। দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ববোধ এবং প্রকৃতি ও নগর জীবনের অভিব্যক্তি তার কবিতার ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যেকে বৈশিষ্ট্যায়িত করেছে। শহর এবং তার সভ্যতার বিকারকে তিনি ব্যবহার করেছেন তার কাব্যে। তার কবিতায় অনুভূতির গভীরতা, চিন্তার সুক্ষ্মতা ও রূপগত পরিচর্যার পরিচয় সুস্পষ্ট। ১৯৭৩ সালে বাংলা কবিতায় অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১১ সালে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধএকদিনের ব্যবধানে কেন্দুয়ার ইউএনওকে চট্টগ্রামে বদলি