বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক, ছাত্রনেতা এবং একনিষ্ঠ ও অগ্রণী সংগঠক শহীদ আসাদ চিরস্মরণীয় নাম। আইয়ুব খানের সামরিক শাসন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। সেই থেকে আসাদ অন্যায় আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক। আসাদের পুরো নাম আসাদুজ্জামান। জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ই জুন নরসিংদীর ধনিয়া গ্রামে। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ পাশ করেন তিনি। ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির সক্রিয় কর্মী ও সংগঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ‘আসাদ’ ছিল প্রিয় নাম, প্রিয় মানুষ। পাকিস্তান বিরোধী গণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন কর্মতৎপরতায় যুক্ত ছিলেন তিনি। ছাত্র জনতার ওপর পুলিশি নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এবং ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবিতে ১৯৬৯-এর ২০ জানুয়ারি ঢাকা সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বটতলার সমাবেশ শেষে ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। পুলিশের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আসাদকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে তিনি শহীদ হন। আসাদের মৃত্যুতে আন্দোলন আরো ব্যাপক রূপ নেয়। এবং দু মাসের মধ্যে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসন ও তাঁর সরকারের পতন ঘটে। ঢাকার আইয়ুব গেট ও আইয়ুব এভিনিউ-এর নাম পালটে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নাম রাখে ‘আসাদ গেট’ ও ‘আসাদ এভিনিউ’। আসাদ ছিলেন মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক। তিনি কৃষক, সর্বহারা ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। নরসিংদীতে তিনি একটি শক্তিশালী কৃষক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত জনশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে শিবপুরে একটি নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। শোষণহীন স্বাধীন দেশের স্বপ্ন ছিল তাঁর। প্রতি বছর ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ‘আসাদ দিবস’ পালিত হয়। শামসুর রাহমানের বিখ্যাত কবিতা ‘আসাদের সার্ট’ শহীদ আসাদের স্মৃতি নিয়ে রচিত।