শহরে নতুন করে সাত স্থানে হবে গণশৌচাগার

চসিকের তত্ত্বাবধানে থাকা ৩৭টির মধ্যে চারটি বন্ধ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নগরে প্রতি এক লাখ ৭৬ হাজার ৪৭০ জন বাসিন্দার জন্য গড়ে মাত্র একটি গণশৌচাগার রয়েছে! আবার বিদ্যমান গণশৌচাগারগুলোর বেশিরভাগই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কোনো কোনোটিতে মহিলাদের জন্য ব্যবস্থা থাকলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই বলে অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে গণশৌচাগার স্থাপন উচিত বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ। অবশ্য শহরে নতুন করে গণশৌচাগার নির্মাণে সাতটি স্থান চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
জানা গেছে, নগরে প্রায় ৬০ লাখ লোকের বসবাস। এর বাইরে প্রতিদিন আরো কয়েক লাখ লোক শহরে আসা যাওয়া করেন। বিপুল সংখ্যক এ জনগোষ্ঠির জন্য চসিকের তত্ত্বাবধানে গণশৌচাগার আছে ৩৭টি। যার চারটিই বর্তমানে বন্ধ আছে। অর্থাৎ চালু আছে ৩৪টি। চৌত্রিশটির মধ্যে গত দুই বছরে একটি বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে সাতটি। তিন বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষে গণশৌচাগারগুলো হস্তান্তর করা হবে চসিকের কাছে। চসিকের স্টেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালেও চসিকের তত্ত্বাবধানে ৪৩টি গণশৌচাগার ছিল।
পরবর্তী দুই বছরে ছয়টি ভেঙে ফেলা হয়। ভবন, সড়ক ও নালা নির্মাণের কারণেই গণশৌচাগারগুলো ভাঙা হয়েছিল। অবশিষ্ট ৩৭টির মধ্যে সাতটি সংস্কারে বেসরকারি দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে), ওয়াটার এইড ও কিম্বার্লি ক্লার্কের সাথে চুক্তি করে চসিক। এরপ্রেক্ষিতে কেসিদে রোড, লালদীঘির পাড়, অঙিজেন মোড়, বিবির হাট গরুর বাজার, শাহ আমানত সংযোগ সড়ক, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও ২নং গেট শেখ ফরিদ মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়।
কোথায় আছে গণশৌচাগার : চসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন, বহাদ্দারহাট কাঁচা বাজার, হাজী আবদুল আলী শপিং আর্কেড, মোমিন রোড, ফিরিঙ্গী বাজার, বন্দরটিলা, অলংকার, ফকিরহাট, চিটাগাং শপিং কমপ্লেঙ, পাহাড়তলী কাঁচা বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট (দুই কক্ষ বিশিষ্ট), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যান্টিন সংলগ্ন, কর্নেল হাট, নিমতলা, শেরশাহ কলোনি, দেওয়ানহাট পোর্ট সিটি, বায়েজিদ বোস্তামী, দেওয়ানহাট শপিং কমপ্লেঙ, রিয়াজুদ্দিন বাজার, চকবাজার আধুনিক চক সুপার মার্কেট, দামপাড়া পুলিশ লাইন, আবদুল মাবুদ সওদাগর হাট, বিআরটিসি, কোর্ট বিল্ডিং রেজিস্ট্রার অফিস সংলগ্ন, বঙিরহাট, পৌর জহুর হকার্স মার্কেট মসজিদ সংলগ্ন, ঈদগাঁ ও লালদীঘি মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় গণশৌচাগার রয়েছে।
বন্ধ আছে চারটি : বিদ্যমান গণশৌচাগারগুলোর মধ্যে জহুর হকার্স মার্কেটের একটি, দামপাড়া পুলিশ লাইন ও আবদুল মাবুদ সওদাগর হাটের গণশৌচাগারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। সর্বশেষ আন্দরকিল্লা শ্রী গুরুধামের গেট সংলগ্ন গণশৌচাগারটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। অবশ্য গণশৌচাগারটি সরিয়ে নেয়ার দাবিতে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর তৎকালীন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া প্রায় এক বছর আগে চেরাগী পাহাড় সংলগ্ন জামালখানে একটি গণশৌচাগার ভাঙা হয়েছিল।
সরজমিন চিত্র : সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, কেসিদে রোড, লালদীঘির পাড়, অঙিজেন মোড়, বিবির হাট গরুর বাজার, শাহ আমানত সংযোগ সড়ক, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও ২নং গেট শেখ ফরিদ মার্কেটে সংলগ্ন এলাকায় বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত গণশৌচাগারগুলো শহরের অন্যান্যগুলোর চেয়ে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এসব গণশৌচাগারে নিরাপত্তা লকার রুম, সুপেয় নিরাপদ পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধী, শিশু, নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক পৃথক টয়লেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে।
গত কয়েকদিনে নিউমার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেটসহ একাধিক গণশৌচাগার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বেশিরভাগের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন। নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। কয়েকটিতে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। যেগুলোতে আছে সেখানকার পরিবেশও নারীবান্ধব নয়। মাঝেমধ্যে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত টয়লেট পুরুষরাও ব্যবহার করে।
সাধারণ মানুষ কি বলছেন : মোবিনুল হক নামে এক পথচারী দৈনিক আজাদীকে বলেন, শহরে পাবলিক টয়লেট বা গণশৌচাগারের অভাব আছে। এতে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। বিশেষ করে নারীরা। সিটি কর্পোরেশনের উচিত গণশৌচাগার নির্মাণে জোর দেয়া। ইসকান্দর নামে এক শিক্ষার্থী আজাদীকে বলেন, যেসব গণশৌচাগার আছে সেগুলোর পরিবেশ ভালো না। আরো অনেক বেশি উন্নত করতে হবে। সুমাইয়া নামে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, নারীবান্ধব গণশৌচাগারের অভাব আছে শহরে। যেগুলো আছে সেখানকার পরিবেশ উপযুক্ত নয় বলে নারীরা সেগুলো ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এ সমস্যা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত সিটি কর্পোরেশনের।
চসিকের বক্তব্য : অপরিচ্ছন্ন গণশৌচাগার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রদান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. মোজাম্মেল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘একটা সময় শহরে গণশৌচাগার ছিলই না। থাকলেও সেগুলো ব্যবহার উপযোগী ছিল না। বর্তমানে যেগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার উপযোগী। দুয়েকটায় হয়তো সমস্যা আছে। সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টাও করি। তবে আমরা যখন গণশৌচাগার পরিচালনায় ইজারাদার নিয়োগ করি তখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে ইজারাদারদের শর্ত দিয়ে থাকি। শর্ত অনুসরণ না করলে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে।’
গণশৌচাগারের সংকট নিরসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন টয়লেট নির্মাণ করার জন্য অমাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে প্রস্তাব আসে। সেগুলোর কোনোটি ফুটপাত বা ড্রেনের উপর করার প্রস্তাব থাকে। কিন্তু ফুটপাত বা ড্রেনে তো পাবলিক টয়লেট করা যাবে না। সেখানে পথচারী চলাচলে সমস্যা হবে। তাই ফিজিবিলিটি স্টাডি করে কোথায় নির্মাণ করা দরকার সেটা চিহ্নিত করছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া।
নতুন সাত স্থান চিহ্নিত : চসিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে গণশৌচাগার নির্র্মাণে সাতটি স্থান চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। স্থানগুলো হচ্ছে- সাগরিকা মোড়, আগ্রাবাদ এঙেস রোড, প্রবর্তক মোড়, অলংকার মোড়, মাদারবাড়ী শুভপুর বাস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। চিহ্নিত স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণে বেসরকারি বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে।
২০২০ সালের ১ অক্টোবর গণশৌচাগার নির্মাণে বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর’কে প্রস্তাবও দিয়েছিল চসিক। এতে বলা হয়েছিল, ‘শহরে প্রতিদিন সন্নিহিত উপজেলা ও দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ চিকিৎসা, ব্যবসা, অফিস-আদালতের জরুরি কাজ ও অন্যান্য প্রয়োজনে আগমন করে থাকে। এ সকল অস্থায়ীভাবে অবস্থানকারীদের জন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শৌচকার্য সম্পাদন নিশ্চিতে জোন ভিত্তিক আরো বেশি পরিমাণে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা প্রয়োজন। চসিকের নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এ ধরণের শৌচাগার স্থাপন সম্ভব নয়। এর আগে চসিকের স্টেট অফিসার কামরুল ইসলাম এক প্রস্তাবনায় বলেছিলেন, পুরো শহরে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে গণশৌচগারের চাহিদা এবং স্থান চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু বলাৎকারের দায়ে কক্সবাজারে ভণ্ড মৌলভীর যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধ১২টি আবাসিক এলাকার দুই তৃতীয়াংশ প্লটই খালি