আমাদের নগরে-শহরে-উপশহরে দেয়ালে-দেয়ালে পোস্টার, চিকায় ভরপুর থাকে সারাবছর। বছরজুড়ে একের পর এক নানা উপলক্ষ্য অবলম্বন করে আত্মপ্রচারকারী সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এমপি-মন্ত্রীদের ছবির সাথে তাদের ছবি দিয়ে পোস্টার সেঁটে দেয় শহরের দেয়ালে-দেয়ালে। জাতির জনক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবিও থাকে পোস্টারে। অথচ বঙ্গবন্ধু এই বাংলাদেশ চাননি; যে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে বা ইন্টারনেটের যুগে এসেও শহরের দেয়ালগুলো হবে পোস্টারে ভরা! পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে শহরের দেয়ালে পোস্টার থাকে না। দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো রীতিমতো অপরাধ অন্যান্য দেশে। আচ্ছা দেয়ালে পোস্টার সেঁটে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করারই বা কি প্রয়োজন এখন? ফেসবুকে তো প্রচার-আত্মপ্রচার সব করা যাচ্ছে। তাহলে কেনো অন্যের বাড়ির দেয়ালে, মার্কেটের দেয়ালে, স্কুল-কলেজের দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করবো? পোস্টার লাগানো, দেয়াল লিখন এই সব একেবারে পুরানো কালচারও বটে। পৃথিবীতে এখন পোস্টার-চিকা একেবারে কমে গেছে। আর এই যে শহরে উপশহরে ছোটো-নেতা, বড়-নেতা, কোয়াটার-নেতা নানা পর্যায়ের শাখা-প্রশাখার নেতার নামে পোস্টার সেঁটে দেয়; আচ্ছা শহরটা কি তাদের একার?
ছোটো ও মধ্যম নেতাদের কথা বাদ দিলাম ধরুন। বড় নেতা, যারা এই শহরের সৌন্দর্য রক্ষা করা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার দায়িত্বে আছেন বা অতীতে ছিলেন তাঁদের সবার নামেই পোস্টারে ভরা থাকে শহর। যা অতীতে ছিলো, এখনো আছে। অথচ, মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ প্রবাসজীবনে দেখেছি সিটি কর্পোরেশন, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক কাজের মধ্যে একটি কাজ হচ্ছে শহরের দেয়ালে, স্থাপনায় অবৈধভাবে সাঁটানো পোস্টার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো। অপরদিকে আমাদের দেশে দায়িত্বে আসীন ব্যক্তিদের নামেই পোস্টারে সয়লাব শহর। কি আশ্চর্য! বহুবছর ধরে দেখে আসছি শহরে কী গ্রামে, চিকা মারার ওস্তাদ বাম দলগুলো। বাম দল মানে যাদের কেউ রাশিয়াপন্থী কেউ চীনপন্থী বলে জানি আমরা। কথা হচ্ছে চীন বা রাশিয়ার শহরগুলোতে চিকা দেখেছেন কি কখনো তারা? না, সে-সব দেশে দেয়ালে চিকা মারা হয় না। চিকা মেরে রাজনৈতিক প্রচার করা হয় না। এতে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। উন্নত দেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের শহরে উপশহরে দেয়ালে-দেয়ালে অযথা পোস্টার সাঁটানো বন্ধ করা প্রয়োজন। দেয়াল লিখনও বন্ধ করতে হবে। পোস্টার হবে টাঙানো, তবে অনুমোদিত। হ্যাঁ, উন্নত দেশে সিটি ও পৌর এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড যা-ই টাঙানো হোক তা অবশ্যই সিটি/পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত হতে হয়। অনুমোদনের পাশাপাশি এটার জন্য একটা কর/ফি-ও নেওয়া যায়। পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড অনুমোদন দেওয়া হবে নির্ধারিত সময়ের জন্য। মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সিটি/পৌর কর্তৃপক্ষ এগুলো উচ্ছেদ করবেন। এ-জন্যই কর বা ফি নিতে হবে। যাতে উচ্ছেদের খরচটা আসে।