শহরের অলিগলি থেকে রাজপথ ধুলোর দখলে

বাতাসের মানদণ্ড অস্বাস্থ্যকরের শেষ ধাপে ।। নানা রোগে আক্রান্ত মানুষ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ।। সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরি পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

শুষ্ক মৌসুম পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই ধুলোবালিতে ঢেকে যাচ্ছে নগরী। শহরের অলিগলি থেকে রাজপথ ধুলোর দখলে। অনেক এলাকায় দিনের বেলায়ও রাস্তায় গাড়ি দেখতে সমস্যা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর একটি শহরে পরিণত হচ্ছে বন্দর নগরী। বাতাসের মানদণ্ড বিচারেও রাতেদিনে নগরজুড়ে বিরাজ করে অস্বাস্থ্যকর আবহ। মাত্রাতিরিক্ত ধুলোবালিতে নগরবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরি পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধুলোবালির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সড়কজুড়ে থাকা খানাখন্দের কারণেও ধুলো বাড়ছে। পাহাড় কাটা, নালা নর্দমা ভরে ওঠা, উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড়সহ নানা কারণে ধুলোময় হয়ে উঠেছে শহর। এদিকে ধুলোবালি পরিষ্কার কার্যক্রম ঠিকভাবে না হওয়া এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বিশেষায়িত গাড়িগুলোর কার্যক্রম না লাগায় ধুলো বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর বাতাসের মানদণ্ড পরিমাপ করার যে সূচক তাতে নগরীর অবস্থা নাজুক। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেঙ বা একিউআই সর্বোচ্চ ৫০ পর্যন্ত হলে ওই বাতাসকে ভালো বলা হয়। শূন্য থেকে এই পরিমাপ করা হয়। কিন্তু গতকাল নগরীর বাতাসে একিউআই ১৬০ পাওয়া গেছে, যা অস্বাস্থ্যকরের শেষ ধাপের দিকে রয়েছে। একিউআই স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হওয়ার অর্থ হচ্ছে নগরীর প্রত্যেক বাসিন্দার ওপর অস্বাস্থ্যকর বাতাসের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। একিউআই ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতার ব্যাপারে অনেকটা জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়। যাতে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের ঘরের বাইরে যেতে এবং অন্যদের ঘরের বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাতে বাতাসের একিউআই স্বাভাবিকভাবে কমে আছে। কিন্তু নগরীতে গতকাল রাতেও একিউআই পাওয়া গেছে ৮০, যা স্বাভাবিকভাবে নগরীর খারাপ পরিস্থিতিরই প্রমাণ দেয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নগরীর টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, জামাল খান, নন্দনকানন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, হালিশহর, বাকলিয়া, পোর্ট কানেকটিং রোড, বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড, মাঝিরঘাট, সদরঘাট, নিউ মার্কেট ধুলোময়। অনেক এলাকায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের কারণে পুরো এলাকা ধুলোবালিতে ঢাকা। নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় দিনের বেলায়ও গাড়ি দেখা যায় না। মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, মোহাম্মদপুরসহ ব্যস্ততম এলাকাগুলো পুরোপুরি ধুলোর দখলে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নানা কাজে ধুলোবালি বাড়ছে। ধুলোর কারণে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা জটিলতা এবং চর্মরোগের বিস্তার ঘটছে।

এদিকে সিটি কর্পোরেশনের ছয়টি বিশেষায়িত সুইপিং গাড়ি এবং ১৬টি পানিবাহী গাড়ি আছে। তবে ছয়টি সুইপিং গাড়ির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ধুলোবালি দমাতে পানি ছিটানোর কার্যক্রমও থমকে রয়েছে।

চসিকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালি বাড়ে। শহরের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলেও ধুলো বেড়েছে। সিটি কর্পোরেশন নানাভাবে চেষ্টা করছে। তবে ধুলোবালি দূর করা সম্ভব হচ্ছে না।

ধুলোবালি বাড়ার কথা স্বীকার করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চারদিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে হচ্ছে। খাল খনন হচ্ছে, নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। সব কার্যক্রমই ধুলো সৃষ্টি করছে। নিয়মিত পানি ছিটানোর কার্যক্রম চলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত বেশি ধুলোবালি যে, পানি ছিটিয়েও সুফল মিলে না। পানি ছিটানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আবার ধুলো সবকিছু ঢেকে ফেলে। সুইপিং মেশিনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত বেশি ধুলো মেশিন ঠিকঠাকভাবে সামলাতে পারে না।

তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ধুলোর ব্যাপ্তি যাতে আর না বাড়ে সেই ব্যবস্থা নেব। নগরজুড়ে পানি ছিটানোর মাত্রা বাড়ানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে শহরের ধুলোবালি কমে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেমন্ত এলো
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬