শবে বরাত : আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বড় সুযোগ

| রবিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

আজ দিবাগত রাত শবে বরাতের রাত। আল্লাহ পাক কোরআনে করিমায় যাকে ‘নিসফে মিন শাবান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবেবরাত’ মানে সৌভাগ্যের রজনী। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই বিশেষ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। এ মাসটিতে হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন।

আজ সেই সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে বরাত, মুসলমানদের কাছে ১৪ শাবান দিবাগত রাত অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতির জন্য তাঁর অসীম রহমতের দরজা খুলে দেন। শাবান মাসের পরই আসে পবিত্র রমজান মাস। শবে বরাত মুসলমানদের দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই রাতের ইবাদতবন্দেগীর গুরুত্ব অপরিসীম।

সাহাবী থেকে শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত আছে। অবশ্য এর কোনো কোনো হাদিসের সনদ দুর্বল। তবে সহিহ হাদিসও আছে।

হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি থেকে বর্ণিত হাদিসে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। [সহিহ ইবন হিব্বান : হাদিস৫৬৬৫ ইবন মাযাহ : হাদিস১৩৯০, উপরোক্ত হাদিসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবন হিব্বান তার কিতাবুসসহিহ এ (যা সহিহ ইবন হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮১ এ) এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদিস। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকী রহ. শুআবুল ঈমান এ (/৩৮২, হাদিস৩৮৩৩), ইমাম তাবরানী আলমুজামুল কাবীর ও আলমুজামুল আওসাত এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদিসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।

হাদিসটির সনদ সহিহ। এজন্যই ইমাম ইবন হিব্বান একে কিতাবুস সহিহ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদিসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন, কিন্তু হাসান হাদিস সহিহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদিসেরই একটি প্রকার।

ইমাম মনযিরী, ইবন রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদিস বিশারদ এই হাদিসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। এ সব রেওয়ায়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহিহ প্রমাণিত হয়। তারপর আলবানী (রহ.) ওই সব লোকের বক্তব্য খণ্ডন করেন, যারা কোনো ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস নেই।

অপর হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাত্রিতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে নেমে আসেন। অনন্তর বনু কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের সংখ্যার চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন। তৎকালীন আরবের প্রায় সকল গোত্রের লোকই কম বেশি বকরি পালন করতো। তম্মধ্যে কালব গোত্রের লোক বকরি পালনে উল্লেযোগ্য ছিলো। হাদিসের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝানো উদ্দেশ্য না। বরং আধিক্য বুঝানো উদ্দেশ্য।

আল্লাহতায়ালা যেকোনো সময় তার বান্দার দোয়াপ্রার্থনা কবুল করতে পারেন। তার পরও বছরের এমন কিছু বিশেষ সময়ক্ষণ রয়েছে, যে সময়গুলোর মর্যাদা ও ফজিলত অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। সেসব দিনক্ষণে কৃত ইবাদত, দোয়ামোনাজাতের মর্যাদা বেশি ও সওয়াবের মাত্রা অপরিসীম। এ বিষয়গুলো মুসলমানদের মনে শবেবরাতে ইবাদতবন্দেগি ও বেশি বেশি নেক কাজ করার স্পৃহাকে জাগিয়ে তোলে। ফলে দেশব্যাপী শবেবরাত উপলক্ষে সৃষ্টি হয় এক ধর্মীয় আবহ। যা মানুষের ধর্মীয় বিষয়াদি পালনের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিরাট সহায়ক হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও ভাবগম্ভীর পরিবেশে শবে বরাত পালন করে থাকেন। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান মসজিদে, বাড়িতে নফল নামাজ আদায়, মিলাদ মাহফিল, দানখয়রাতের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করবেন। শবে বরাতের এই মহিমা সমুন্নত রাখতে হবে প্রতিটি ক্ষণে, যাতে কোনো অশুভ ও অকল্যাণ আমাদের স্পর্শ করতে না পারে। ইসলামের শান্তি, সমপ্রীতি ও সহাবস্থানের শাশ্বত বাণীর প্রতিফলন ঘটাতে হবে চিন্তা ও কর্মে। ইসলামের শিক্ষা থেকে কখনোই যাতে আমরা বিচ্যুত না হই, সে ব্যাপারেও সদা সজাগ থাকতে হবে। এই রাতে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে আবেদননিবেদন করব এবং অশ্রুসিক্ত হয়ে আল্লাহর প্রিয়জনদের পাশে থেকে তার দরবারে এভাবে প্রার্থনা করব, হে আল্লাহ! আমরা অপরাধী! তোমার দরবারে পেশ করার মতো কোনো যোগ্যতা আমাদের নেই, তবে আমরা তোমাকে, তোমার প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, অন্তরে রয়েছে তোমার প্রতি অনুরাগ, জাহান্নামের ভয়, জান্নাত লাভের কামনা, তোমার করুণার কোনো শেষ নেই, তুমি করুণা করে আমাকে মানুষরূপে সৃজন করেছ, লক্ষকোটি নেয়ামতদানে বাধিত করেছ। আর মহান এ রাতে তোমার দরবারে তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে বসে মোনাজাতের সুযোগ দিয়েছ। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি করুণা করে আমাদের ক্ষমা করে দাও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে