মাহে রমজান সমাগত। আমাদের দেশে রমজান আসার আগে থেকে শুরু হয় ঈদ বাজারের প্রস্তুতি। ঈদকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বাহারি রঙ ও ডিজাইনের পোশাক নিয়ে আসেন। এছাড়া দর্জি পাড়াতে বেড়ে যায় কাপড় সেলাইয়ের ব্যস্ততা। অপরদিকে অনেক ক্রেতা সেরে নেন আগাম কেনাকাটা।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর টেরিবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আমিন সেন্টার, ইউনেস্কো সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, স্যানমার ওসান সিটি, শপিং কমপ্লেঙ, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা ও মিমি সুপার মার্কেটে বিভিন্ন কাপড়ের শো–রুমের ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের কর্মচারীরা নতুন জামা শো–রুমে থরে থরে সাজাচ্ছেন। তবে মার্কেটগুলোতে ঈদের আমেজ লক্ষ্য করা না গেলেও কিছু কিছু ক্রেতা তাদের পছন্দের পোশাক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। এদেরই একজন গৃহিণী তাহমিনা সুরাইয়া। তিনি জানান, রমজানের বাকি আছে মাত্র ক’দিন। রমজানের সময় মার্কেটে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তাই আমি প্রতি বছর আগাম কেনাকাটা সেরে ফেলি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এ বছর পোশাকের দাম খুব বেশি মনে হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতি বছরই ক্রেতা আকর্ষণে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে তারা ঈদ বাজারের ৬০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ফলে দোকান এবং ফ্যাশন হাউসগুলোতে শোভা পাচ্ছে ঈদের নতুন জামা। অন্যদিকে ঈদের বাজারে ভিনদেশী পোশাকের দাপটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশীয় ফ্যাশন হাউস মালিকরা। তারা জানান, আমাদের দেশে প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সারাবছর কষ্ট শিকার করে আমরা ঈদের এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের গড়া মার্কেটটি ভারতীয় পণ্যের দখলে চলে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের শো–রুমে অনেক ক্রেতা এসে ভারত–পাকিস্তানের কাপড়ের খোঁজ নেন। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় পণ্য রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে দেশের বাজারে প্রবেশ করে। অথচ আমাদের পণ্যের গুণগত মান ভারত–পাকিস্তানের পণ্যের চেয়ে অনেক ভালো। তারপরেও আমরা আশা করছি, এ বছর সব বয়সী ক্রেতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দেশীয় পোশাকই।
আফমি প্লাজার ফ্যাশন হাউস ‘কৃষ্টি বুটিক’ এর স্বত্বাধিকারী নুজহাত নুয়েরি কৃষ্টি দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের কারখানার শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছে। তবে এ বছর সব ধরণের ফেব্রিঙ –বাটন, সুতা থেকে শুরু করে কাঁচামালের দাম বাড়তি। তাই আমাদের উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। এবারও যেহেতু ঈদ গ্রীষ্মকালে হচ্ছে তাই আমরা সুতি কাপড়ের ওপর জোর দিয়েছি। আমাদের শো রুমে হাতের কাজের সেলোয়ার কামিজ, শাড়ি, ফতুয়ার ব্যাপক চাহিদা আছে। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। দেশীয় পোশাক শিল্পকে আরো এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে আমাদের মতো উদ্যোক্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিদেশী পোশাকের দাপটেও আমরা কিছুটা অসহায়।
সানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঈদে উপলক্ষে আমরা থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন থেকে বিভিন্ন পোশাক আমদানি করেছি। তবে এবার যেহেতু ডলারের দাম বেশি ছিল, তাই পোশাকের দামও স্বাভাবিকভাবে বেশি পড়বে। আশা করি সময় গড়ানোর সাথে সাথে আমরা ক্রেতাদের আশাব্যঞ্জক সাড়া পাবো।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সদস্য সচিব মো. ফজলুল আমিন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে বাহারি ডিজাইনের পোশাক সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছেন। জহুর হকার্স মার্কেট সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য সবশ্রেণীর পেশার জন্য একটি আদর্শ মার্কেট। এই মার্কেটে ক্রেতারা কম দামে সব সময় ভালো পণ্যটি পেয়ে থাকেন। এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির অধীনে প্রায় ১১০টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটে জুতা, কাপড়, ব্যাগ, জুয়েলারি, কসমেটিকস থেকে সব ধরণের পণ্যই বিক্রি হয়। অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে পোশাক আমদানি করেছেন। আবার অনেকে স্থানীয়ভাবে অনেকে পোশাক তৈরি করছেন। আশা করছি এ বছর ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারবে। আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বিষয়ক অনেক উদ্যোগ নিয়েছি।
টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোছাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা সারা বছর রমজান মাসের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সারা বছর কিছু না কিছু বেচাবিক্রি হলেও ঈদের সময়টা ভিন্ন। আমাদের ব্যবসায়ীরা সব ধরণের ফ্যাশনেবল পোশাক আশাক সংগ্রহ করছেন। কারণ ক্রেতার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।