শত বছরের প্রথা ও শিরনির ডেক

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

গ্রামের গাছিরা একদিন রস বিক্রি করেন না। ওইদিন ভোর থেকে তারা শত শত কেজি রস নিয়ে রাখেন এক জায়গায়। সেই রস দিয়ে রান্না হয় রসের শিরনি। গ্রামের সবাই মিলে পাঁচ শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে খেজুরগাছের কয়েক মণ টাটকা রস, বিন্নি ধানের চাল, সাকু, নারকেল, এলাচ, দারচিনিসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের মিশ্রণে এটি রান্না হয়। সেই শিরনি খাওয়ানো হয় গ্রামের হাজারো মানুষকে। মানুষের মঙ্গল ও সুস্থতা কামনায় বিতরণ করা হয় এই শিরনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের উত্তর ভাটেরখীল গ্রামে এই আয়োজন প্রতি বছর হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ওই গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় একশ বছর আগে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে যখন গ্রামের অনেক মানুষ মারা যাচ্ছিল তখন কেউ একজন স্বপ্ন দেখেন, ওই এলাকার এক কবরস্থানের পাশে শিরনি রান্না করে সবাইকে খাওয়ালে মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে এই শিরনি আল্লাহর ওয়াস্তে দিতে হবে এবং স্বেচ্ছায় শিরনি রান্নার কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন। কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া যাবে না। সেই থেকে শুরু। শিরনি রান্নার আগে মসজিদে খতম পড়ানো হয়। গ্রামের মানুষ শিরনি রান্নার কাজে সহযোগিতা করেন। গ্রামের তিনচার হাজার মানুষ শিরনি খেতে আসেন। ৮৯ বছরের বৃদ্ধ আজমত উল্লাহ বলেন, বহু বছর ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে। আবদুল করিম (৬৫) বলেন, আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি এ আয়োজন। এটার নাম ছিল ডেক রান্না। গ্রামের সর্দার মো. ইউছুফ বলেন, এখানে পুরনো একটি বটগাছ আছে। মূলত এ বটগাছকে ঘিরে আজ থেকে ১৩০/১৪০ বছর আগে গাছের নিচে শিরনি রান্না করে খাওয়ানো হতো। তখন প্রায় গ্রামে কলেরা রোগ আসত। ডাক্তার ছিল না। যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে এই আয়োজনটা গ্রামের মানুষ পালন করে আসছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেব না : মোমেন
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প উৎপাদনে যাচ্ছে জুনে