লোহাগাড়ায় গত দশ দিনে পুকুরের পানিতে ডুবে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উভয়ে খেলাচ্ছলে পুকুরের পানিতে পড়ে গেছে বলে জানা যায়। চলতি বছরে উপজেলায় বন্যা, খাল ও পুকুরের পানিতে ডুবে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জন শিশু ও ৪ জন প্রাপ্ত বয়স্ক। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনার জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।
জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর উপজেলার পদুয়া ছগিরা পাড়ায় নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে পুকুরের পানিতে ডুবে মোহাম্মদ আরহাম নামে আড়াই বছরের এক শিশু, গত ১৯ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের উজিরভিটা গোল মোহাম্মদ পাড়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে মো. আদনান নুর আরাফ (৬) নামে এক শিশু ও গত ২৩ অক্টোবর একই ইউনিয়নের হোছন আলী মাতব্বর পাড়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে জান্নাতুল ওয়াজিহা নামে ২ বছর ২ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৩ অনুযায়ী, ১–১৭ বছরের শিশুদের অপমৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। যা যৌথভাবে নিউমোনিয়া, অপুষ্টি ও কলেরার কারণে মৃত্যুর চেয়েও বেশি। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় জরিপে বছরে ১–১৭ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৪৩৮ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। যা বর্তমানে একটি অবহেলিত জাতীয় সংকট। এভাবে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো– বয়স্কদের তত্ত্বাবধানের অভাব, গ্রামের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের অভাব, পুকুর–জলাধারে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভাব ও সাঁতার না জানা। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে ৯৮ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ শিশুর ৪ বছর পূর্ণ হয়নি। যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছে। ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে পানিতে ডুবে মৃত্যুসংশ্লিষ্ট মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক উল্লেখ করে নিবারণ কৌশল বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার আমন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে মৃত্যু বিষয়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনে সম্মত হয়েছে। একইসঙ্গে ২০২৩ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫ জুলাই বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিহার দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ডিজাস্টার অ্যাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিবারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জনসচেতনতা এবং মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সাঁতার প্রশিক্ষণ এবং জলাধার থেকে সুরক্ষা কৌশল শিখানো, অনিরাপদ জলাধারে বেষ্টনী প্রদান এবং কমিউনিটি ডে কেয়ার স্থাপনে কাজ করছে। এমতাবস্থায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিবারণে ভূমিকা পালন করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ–পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া জানান, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধ করতে পরিবারের সদস্যদের সচেতন হবার বিকল্প নেই। গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হবার পরামর্শ দেন তিনি। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ উল্যাহ জানান, উপজেলায় সরকারি–বেসরকারিভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কোন প্রকল্প নেই। তবে আমরা প্রায় সভা–সেমিনারে এই ব্যাপারে সচেতন করে থাকি। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে সর্বপ্রথম পরিবারকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষেকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।












