মানুষ সামাজিক জীব হেতু নিজেকে বিভিন্ন অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয় এবং প্রয়োজন, অপ্রয়োজনে একে অপরের উপর নির্ভর করতে হয়, সমাজে টিকে থাকার লড়াইয়ে বিভিন্ন সময় অনেকের মধ্যে জন্ম নেয় লোভ, লালসার বাসনা। ফলে তাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় ঘটে। কালের বিবর্তনে সবকিছুই যেমন ক্ষয় হয়, ঠিক তেমনি ক্ষয় হয় মানুষের মূল্যবোধ তথা নৈতিকতাবোধ। সভ্যতা যতই আধুনিক যান্ত্রিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততই মানুষের মধ্যে লোভ লালসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সমাজে নৈতিক মূল্যবোধহীনতার কারণ হিসেবে নির্দিষ্ট করে কোন একটি বিষয়কে চিহ্নিত করা যায় না, তবে সাধারণভাবে মূল্যবোধহীনতার প্রাথমিক কারণ হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা যায় মানুষের সর্বগ্রাসী লোভ লালসার বাসনাকে। মানুষ যখন চাহিদার তুলনায় বেশি পায় বা চায় তখনই তার মধ্যে লোভ লালসার জন্ম নেয়। মানুষের অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষাই সকল সমস্যার জন্ম দেয়।
মানুষের অতিরিক্ত লোভ লালসায় সমাজে জন্ম দিয়েছে অনাচার, দেশ তথা বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি, সমাজবিরোধী ও দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডের। প্রতিটি মুহূর্তে সমাজ তথা দেশের মানুষকে এ সবের মূল্য চোকাতে হচ্ছে যা কারো কাম্য নয়। লোভ কখনই কোন মানুষের জীবনে সুফল বয়ে আনতে পারে না। যারাই লোভের বশবর্তী হয়ে বিত্তশালী কিংবা সমাজপতি হয়েছেন তারাই পরিণামে ধ্বংসের দিকে পতিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সুশীল সমাজ তথা মনোবিজ্ঞানীরা। লোভ লালসা মানুষকে তার বিবেক বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে তাকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং ভালোমন্দ, পাপপুণ্য বিচারের ক্ষমতা নির্মূল করে ফেলে। অতিশয় লোভের পরিণতিতে সে বিপথগ্রস্ত হয় ফলে তার ধ্বংস অণিবার্য হয়ে পড়ে। তাই চাহিদার চেয়ে বেশি কিছু আশা না করে নিজের মেধা ও সামর্থ্যানুযায়ী উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবন যাপন করতে পারলে মন থেকে দূর হবে লোভ লালসা এবং দেশ পাবে একটি দক্ষ জনশক্তি। তাই লোভ নামক ধ্বংসাত্মক ও ভয়ানক রিপুকে মন থেকে পরিহার করে সৎপথে থেকে সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।
লেখক: শিক্ষক